নতুন কোচ। নতুন ফিজিক্যাল ট্রেনার। আর সবুজ-মেরুন জার্সিতে একগুচ্ছ নতুন মুখ নিয়ে শুরু হয়ে গেল মোহনবাগানের মরসুম। অনুশীলনের প্রথম দিন বিদেশি বলতে ছিলেন কোচিং স্টাফের তিন জন। টোলগে ওজবে ক্লাবে এলেও মাঠে নামলেন না।
আর কোচ সন্তোষ কাশ্যপ প্রথম দিনেই ভক্তদের মন কাড়লেন কাজ-কামাই করে অনুশীলন দেখতেআসার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে। কয়েকশো সমর্থককে দেখে নতুন কোচ অভিভূত। মাঠ থেকে বেরোনোর আগে সমর্থকদের জন্য তিনি ও ফুটবলাররা হাততালি দিলেন। পরে বললেন, “কাজ ফেলে এত লোক মাঠে এসেছে দেখে অভিভূত। এটা শুধু কলকাতাতেই হতে পারে।” ভক্তদের তাঁর কাছে দাবি ছিল ট্রফির খরা কাটিয়ে ফেলার। সাংবাদিক সম্মেলনে মোহন-কোচ বলেন, “ট্রফির জন্যই তো খেলব। তবে খেয়াল রাখতে হবে ট্রফি না পাওয়ার ভয় যেন জাঁকিয়ে না বসে। তার থেকেই কিন্তু চাপটা তৈরি হয়। চাপ পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলে। ফুটবলাররা ভাল খেললে তবেই ট্রফি আসবে। সে জন্য সব কিছু উপভোগ করাটা খুব জরুরি।” |
ট্রেভর মর্গ্যান নেহরু কাপের শিবিরে ফুটবলার ছাড়া নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন কলকাতায় পা রেখেই। মোহনবাগানের নতুন কোচ অবশ্য সেই পথে গেলেন না। বললেন, “ফুটবলার ছাড়ার সিদ্ধান্ত ক্লাবের। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার খুব আপত্তি নেই।” তাঁর যুক্তি, “জাতীয় দলের হয়ে খেলা ফুটবলারদের কাছে গর্বের। তা ছাড়া ওখানে গিয়ে তো বসে থাকে না। অনুশীলনের মধ্যেই থাকে। আর ওই ক্যাম্পে চোট পাওয়া না-পাওয়া নির্ভর করে কোচের উপর। কোচই ফুটবলারদের তরতাজা রাখতে পারে।”
সাড়ে আটটা থেকে তাঁবুর ভিতর শুরু হয়ে গিয়েছিল ফুটবলারদের সঙ্গে কোচের পরিচয়পর্ব। মাঠে নামতে সময় লাগল আরও ৪৫ মিনিট। একে একে ফুটবলাররা বেরোচ্ছেন, আর তাঁবু থেকে গ্যালারি পর্যন্ত রাস্তার ধারে ততই উত্তেজনা বাড়ছিল। বেশিটাই টোলগেকে দেখার জন্য। শেষ পর্যন্ত টোলগে প্র্যাক্টিসে না এলেও, একে একে ঢোকেন নতুন মুখ। অরিন্দম ভট্টাচার্য, নির্মল ছেত্রী, দীপেন্দু বিশ্বাস, ডেনসন দেবদাস, আইবর সিংহ, খেলেম্বা সিংহ, বিশ্বজিৎ সাহা, বরুণদীপ। সঙ্গে পৈলান অ্যারোজ থেকে আসা সি এস সাবিথ, বীজেন্দ্র রাই, রাজীব ঘোষ, নবীন কুমাররা। সমর্থকদের বেশি উচ্ছ্বসিত দেখাল নির্মল ছেত্রীকে ঘিরে।
কী বললেন নতুন ফুটবলাররা? ইস্টবেঙ্গল থেকে আসা নির্মলের কথায়, “পুরোনো দল এখন অতীত। নতুন কোচের সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল। টোলগে-ওডাফা এক সঙ্গে খেললে সেটাই সেরা স্ট্রাইকার জুটি হয়ে যাবে।” প্রয়াগ ইউনাইটেড থেকে আসা দেবদাসের মন্তব্য, “কোচের সঙ্গে অনেক কথা হল। মাঝমাঠে আমার দায়িত্ব নিয়ে। সেটা ভাল ভাবে করতে চাই।” ছয় বছর পরে মোহনবাগানে ফিরে দীপেন্দুর স্বস্তি, নতুন কোচ তাঁর অপরিচিত নন। মহীন্দ্রায় খেলার সময় তাঁদের সহকারী কোচ ছিলেন। “তখন থেকেই জানি, উনি ভাল কোচ” বললেন দীপেন্দু।
নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড কাম মিডফিল্ডার স্ট্যানলি ওকোরোগে এবং ডিফেন্ডার আনিইচে এচেজোনা আসবেন ক’দিনের মধ্যে। মেহরাজউদ্দিন, অনিলকুমার ছাড়া সব ভারতীয় ফুটবলার চলে এসেছেন। ওডাফা ওকোরির আসার কথা আরও পরে। সুব্রত ভট্টাচার্যের আমলে টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করে তিন প্রাক্তনকে রেখেছিলেন কর্তারা। সেই চুনী গোস্বামী, প্রদীপ চৌধুরী, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়দের কাউকে দেখা যায়নি। প্রাক্তন ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। সচিব অঞ্জন মিত্র যা বললেন, তাতে পুরোনো কমিটি ছিল গত মরসুমের জন্য। এখন নতুন কমিটি তৈরি হবে কি না, সেটাই ঠিক হয়নি। “কমিটি থাকবে কি না, হলে কারা আসবে, ঠিক হবে পরে।” আপাতত যা কোচ সন্তোষের জন্য সবচেয়ে সন্তোষজনক খবর। |