জাতীয় শিবিরের ওষুধেই মেয়েদের শরীরে পরিবর্তন হয়, বললেন পিঙ্কি
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আনন্দবাজারকে পিঙ্কি প্রামাণিক বলে দিলেন, “জাতীয় শিবিরে থাকার সময় পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য যে সব ওষুধ অ্যাথলিটদের খাওয়ানো হয় তাতে অনেক মেয়ের শরীরেই নানা পরিবর্তন আসে। আমি দেশ-বিদেশের বহু অ্যাথলিটকে দেখিয়ে দিতে পারি, যাদের গোঁফ-দাঁড়ি বেরিয়েছে। গলার স্বর বদলেছে। তাতে কি সে পুরুষ হয়ে গেল? আমি যত পদক পেয়েছি সব মেয়ে হিসাবেই। আমি মেয়েই।”
পিঙ্কির দাবিতে সিলমোহর দিচ্ছেন স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নিশীথ রায় চৌধুরী থেকে দ্রোণাচার্য অ্যাথলেটিক্স কোচ কু্ন্তল রায়। দু’জনেরই মত, পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য কোচেরা যে ‘অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন’ ব্যবহার করেন তাতে মেয়েদের মধ্যে পুরুষালি ভাব দেখা যেতেই পারে। ছোট হয়ে যেতে পারে বিভিন্ন অঙ্গ।
ছাড়া পাওয়ার পর নিজের বাড়িতে। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ডোপিং ধরে বেড়ান ফিফার মেডিক্যাল কমিশনের সদস্য নিশীথবাবু। বললেন, “হরমোনাল ড্রাগগুলো ব্যবহারের ফলে মেয়েদের গোঁফ দাড়ি বেরোয়। গলার স্বর বদলায়। ছেলেদের উপর ওই ওষুধ প্রয়োগ করলে তাদেরও মেয়েদের মতো বহিরঙ্গে অনেক পরিবর্তন হয়।” আর সোমা বিশ্বাস থেকে সুস্মিতা সিংহ রায়বহু অ্যাথলিটকে যিনি তারকা করেছেন সেই নামী কোচ কুন্তলবাবুর প্রতিক্রিয়া, “হরমোন ড্রাগের প্রভাবে নারীর শরীরের কোমল ভাব বদলে কাঠিন্য আসতে পারে। পেশির গঠনও পুরুষের মতো হতে পারে।”
দোহা এশিয়াডে সোনা জয়ী পিঙ্কি প্রামাণিক নারী না পুরুষ? বুধবার জামিন পেলেও দেশ জুড়ে গত তিন সপ্তাহ জুড়ে চলা সেই মহা-বিতর্কের এখনও মীমাংসা হয়নি। আদালতে খোলা হয়নি এস এস কে এমের ডাক্তারদের পাঠানো লিঙ্গ নির্ধারণের রিপোর্ট।
পিঙ্কির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা খেলাধুলোর জগতে নতুন কিছু নয়। কেরলের নানি রাধা, মণিপুরের ইভা মুন্সিদেবী, তামিলনাড়ুর শান্তি সুন্দরাজন, অনুসূয়া বাঈ বা হালফিলের বাংলার মেয়ে ফুটবলার বন্দনা পালপ্রত্যেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। বিতর্ক হয়েছে ওই মেয়েরা আদৌ মেয়ে কি না তা নিয়েই। তাঁদের পরীক্ষাও হয়েছে। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম তিলকডিহির মেয়ে পিঙ্কি এ দিন দাবি করলেন, “এশিয়াড, কমনওয়েলথ, ইন্ডোর চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড কাপ, গ্রাঁ প্রি। কত বলব? আর সার্কিটে সব মেয়ে সবাইকে চেনে। একটু ভুল ত্রুটি হলেই যে আমার কাছে হেরে গিয়েছে সে অভিযোগ করবে। আমি পুরুষ হলে কেউ ছেড়ে দিত? ঠিক অভিযোগ করত। এটা আর কেউ না জানুক মাঠের মেয়েরা জানে।” তাঁর পাশে তখন হাজির এশিয়াডে জোড়া পদকজয়ী জ্যোতির্ময়ী শিকদার।
ছাব্বিশ দিন পর জেল থেকে তেঘরিয়ার বিদিশা পল্লীর নিজের বাড়িতে ঢুকতে পেরেছেন। তাও অনেক নাটকের পর। বিধ্বস্ত হলেও নিজের উপর অসম্ভব আস্থা। অনেকেরই ধারণা, পিঙ্কি ‘পুরুষ’ প্রমাণ হলে তাঁর পদক কেড়ে নেওয়া হবে? যা শুনে সোনার মেয়ে বললেন, “কোনওদিন ও সব প্রমাণ হবে না। আমি গ্রামের মেয়ে। ক্রোমোজোম-ট্রোমোজোম বুঝি না। আমার যা সাফল্য তা মেয়ে হিসাবেই। আমার মা-বাবা জানে। গ্রামের লোক জানে। সতীর্থরা জানে।” বাস্তব হল, আন্তর্জাতিক স্তরে অবসর নেওয়ার পর কোনও অ্যাথলিটেরই পদক কাড়ার নিয়ম নেই। একমাত্র ডোপিং ধরা পড়লেই পদক কেড়ে নেওয়া হতে পারে। পিঙ্কি অবসর নিয়েছেন চার বছর আগে। ২০০৮-এ।
আদালত থেকে অভিযোগ-মুক্ত হলেও পিঙ্কি কি ফিরতে পারবেন স্বাভাবিক জীবনে? “মাঠে ফিরতে তো চাই। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে। তবে কোচিং করানোর সুযোগ পেলে করব। যদি সবাই দূরে সরিয়ে দেয় তা হলে সমাজসেবা করব। কী যে হয়ে গেল!” বলতে বলতে গলা ধরে আসে হঠাৎ-ই তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়া পিঙ্কির।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.