দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে বাইরে পা রাখেন সকাল ৯টা ৪০ নাগাদ। কিন্তু তেঘরিয়ার বিদিশাপল্লিতে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকতে পিঙ্কি প্রামাণিকের লেগে গেল আরও প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা।
জেল থেকে বেরিয়েই পিঙ্কি ঠিক করেন, গিয়ে উঠবেন বিদিশাপল্লির ফ্ল্যাটে। বাগুইআটি থানায় গিয়ে সে কথা জানিয়ে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেখেন, গেটে তালা। তখন বেলা পৌনে ১২টা। সঙ্গে প্রাক্তন অ্যাথলিট জ্যোতির্ময়ী শিকদার, পিঙ্কির বাবা দুর্গাচরণ প্রামাণিক ও তাঁর আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। এলাকার কাউন্সিলর পিঙ্কিকে মালা দিয়ে স্বাগত জানান। দরজার চাবি না থাকায় পিঙ্কি তখনও বাইরে। অনেকে বলতে শুরু করেন, তালা ভেঙে ঢকুন! আকাশ কালো করে তখন বৃষ্টি আসছে।
পুলিশ চাবি আনবে, এই আশায় পিঙ্কি প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন বাড়ির সামনে। বলেন, “জেল থেকে বেরিয়েও হয়রান হতে হচ্ছে। নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারছি না!” তাঁকে ঘিরে ছিল এলাকার মানুষ আর বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা। দেরি দেখে সেই অপেক্ষারত জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে তত ক্ষণে। শুরু হয়েছে তালা ভাঙার চেষ্টাও। সে জন্য এক সময় পিঙ্কির হাতেও হাতুড়ি তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু আইনজীবীর পরামর্শে পিঙ্কি তখন সে কাজে হাত না লাগিয়ে আরও এক বার যান বাগুইআটি থানায়। পুলিশ তাঁকে তখন জানায়, অভিযোগকারিণী অনামিকা আচার্যের কাছ থেকে চাবি আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। সেই চাবি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে পিঙ্কিরা ফ্ল্যাটে ফেরেন দুপুর দু’টো নাগাদ। তালা খোলা হয়। অবশেষে নিজের ঘরে পা রাখেন পিঙ্কি। বলেন, “জানি না আরও কত হেনস্থা হতে হবে!”
উষ্মা ছিল পিঙ্কির বাবা দুর্গাচরণবাবুর গলাতেও। তিনি বলেন, “জেল থেকে বেরিয়েও মেয়েকে যে এ ভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে তাতে বিস্মিত!” পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “ফ্ল্যাটের চাবি আমাদের কাছে ছিল না। ছিল অভিযোগকারিণীর কাছে। পিঙ্কি চাবি চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযোগকারিণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে আসি। সে জন্য যেটুকু সময় দরকার, সেটুকুই শুধু নেওয়া হয়েছে।”
পিঙ্কির জামিন হয়েছিল মঙ্গলবারই। সন্ধ্যা পর্যন্ত বারাসত আদালত থেকে জেলে নথি না পৌঁছনোয় সে দিন তিনি মুক্তি পাননি। এ দিন যখন বাইরে পা রাখেন, তাঁর পরনে স্ট্রাইপ টি শার্ট, জিন্স। তখন থেকে তাঁর সঙ্গী জ্যোর্তিময়ী ও দুর্গাচরণবাবু। জ্যোতির্ময়ী বলেন, “ধরার পর ওঁকে পূর্ব রেলের চাকরি থেকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ করব যাতে ওঁকে ফের কাজে বহাল করা হয়।” পিঙ্কিও জানান, অফিসে যাবেন। তাঁর আশা, কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে সমস্যা হবে না। জমি প্রসঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী জ্যোতির্ময়ী শিকদারের স্বামী অবতার সিংহের বিরুদ্ধে আঙুল তোলেন। বলেন, “কসবার ওই এলাকায় কিছু খেলোয়াড়কে জমি দেওয়া হয়। মানুষের অভিযোগ, তার অনেক জমি নাকি অবতার সিংহের হস্তগত।” মদনবাবুর বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দেন জ্যোতির্ময়ী। এ দিন পিঙ্কির ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট জমা পড়েছে বারাসত আদালতে। বাগুইআটি থানার তদন্তকারী বিকেলে রিপোর্ট জমা দেন বারাসত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে। আজ, বৃহস্পতিবার পিঙ্কির বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। |