আর লিঙ্গ পরীক্ষা দিতে নারাজ পিঙ্কি
র তিনি লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা দেবেন না বলে বুধবার জানিয়ে দিলেন সোনাজয়ী অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামাণিক।
এ দিন সকালে দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। পরে তেঘরিয়ায় নিজের ফ্ল্যাটে বসে পিঙ্কি আনন্দবাজারকে বলেন, “বারবার পরীক্ষা দিতে যাব কেন? আমি আর কোনও ধরনের পরীক্ষা দেব না। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাকে অনেক বার এই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। প্রয়োজনে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাব।”
পিঙ্কির অভিযোগ পুলিশের প্রতি। আর আস্থা বিচারব্যবস্থায়। তিনি অভিযোগ করেন, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বেহুঁশ করে তাঁর লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা হয়। এবং সেটা জোর করে। তেঘরিয়ার এক নার্সিংহোমে এই পরীক্ষা হয় বলে পিঙ্কির অভিযোগ। তিনি দাবি করেন, “আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ওই পরীক্ষা করা হয়। পরে হুঁস ফিরতে দেখি, আমার দু’হাত বাঁধা। তখন ওখানে অনামিকা এবং পুলিশও ছিল।” আদালতের নির্দেশ ছাড়া কী করে পুলিশ ওই পরীক্ষা করালো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পিঙ্কির আইনজীবীরা।
ঘরে ফেরার পর। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য পিঙ্কির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, অসুস্থ অবস্থায় পিঙ্কিকে সেখানে আনা হয়। তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করে পরের দিন সকালে ছেড়েও দেওয়া হয়। সল্টলেকের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও বলেন, “ওই রাতে পিঙ্কি জেরার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। তাঁর কোনও লিঙ্গ পরীক্ষা হয়নি।” একই সঙ্গে জানান, পিঙ্কি যদি কোনও পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ করেন, তবে তিনি তদন্তের নির্দেশ দেবেন। তদন্তে কোনও পুলিশ দোষী সাব্যস্ত হলে নিশ্চয়ই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলে তাঁর থাকার ব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ করেছেন পিঙ্কি। বলেছেন, ছেলেদের বিভাগে আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তাঁর। প্রথম দিকে পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশের ব্যবস্থা না থাকলেও পরে তার ব্যবস্থাও করা হয়। তবে জেল সম্পর্কে এটুকুই অভিযোগ তাঁর। বরং পিঙ্কি এ দিন বারবার বলেছেন, জেলেও নয়, তাঁকে একাধিক বার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বাগুইআটি থানায়। যদিও রাজীব কুমার বলেন, “পিঙ্কির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এমন কোনও অভিযোগ পিঙ্কি করেননি। করলে তা খতিয়ে দেখা হবে।”
এশিয়াডে সোনা জয়ের পরে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার পিঙ্কিকে যে জমি দিয়েছিল, তার কী হল, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। পিঙ্কি এ দিন বলেন, “ওই জমি আমার নামেই আছে। আমি সেখানে বাড়ি করছি। ওই জমি বিক্রি করা যায় না।” একই সঙ্গে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে আছে তাঁর। পিঙ্কির বক্তব্য, “আমি চাই সত্য ঘটনা প্রকাশ হোক।” আরও এক বার বলেছেন, “পুলিশের উপর আমার কোনও আস্থা নেই। আদালতের উপর আস্থা আছে।”
পুলিশের আচরণে পিঙ্কি ব্যথিত। কিন্তু তাঁর যাবতীয় ক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছেন অভিযোগকারিণী অনামিকা আচার্য। তাঁর সোজাসাপ্টা কথা, “ওই মেয়েটা (অনামিকা) আমাকে ফাঁসিয়েছে।” তিনি অনামিকার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার কথাও ভাবছেন বলে জানান এই সোনাজয়ী অ্যাথলিট। নিজের উপরে দিয়ে কী ঝড় গিয়েছে, তা বলতে গিয়ে এক সময় তিনি বলে ফেলেন, “রামায়ণে সীতাকেও অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল। সে ভাবেই নিজেকে বুঝিয়েছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম, আমিও পাশ করবই।”
পিঙ্কি-অনামিকার গোলমালের শুরু মাস তিনেক আগে। এ দিন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের চাপানউতোরে আরও এক দফা তরজা চলে দু’পক্ষে। পিঙ্কির অভিযোগ, “আমার ক্যামেরা, টাকা পয়সা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তা নিয়ে হইচই চলছিলই। এরই মধ্যে আমার একটা গলার হার চুরি যাওয়ায় সন্দেহ গিয়ে পড়ে অনামিকার ওপর। আমি অনামিকার বিরুদ্ধে বাগুইআটি থানায় চুরির অভিযোগ করব বলে জানাই। সেটাই কাল হল আমার।” কেন? পিঙ্কির অভিযোগ, “এর পরই ও খেপে যায়। এক দিন সকালে উঠে দেখি আমার পায়ের বুড়ো আঙুলে রক্ত। পরে বুঝতে পারি রাতে খাওয়ার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল। তার পর ছুঁচ ফুটিয়ে দেখতে চেয়েছিল আমি জ্ঞান হারিয়েছি কি না। সম্ভবত তখনই ও আমার কিছু নগ্ন ছবি তোলে। পরে সেগুলো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করত।” অনামিকা কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে তোলা পিঙ্কির সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “হার চুরির কাহিনি পুরো মিথ্যা।” তার পরেই প্রশ্ন, “ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের কথা তুলছে কেন? আসলে ও জানে সমস্যাটা ওর। তাই আগেভাগেই সাফাই গেয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ও ভয় পেয়ে এখন মিথ্যা গল্প ফাঁদছে।”
পিঙ্কি আরও বলেন, “ব্ল্যাকমেল চলতে থাকলে প্রথমে আমি ওকে (অনামিকাকে) বাড়ি থেকে চলে যেতে বলি। ও ২০ লাখ টাকা চায়। নয়তো এই বাড়িটাই। তখন আমিই বাড়ি থেকে চলে যাই। শিয়ালদহের স্পোটর্স কমপ্লেক্সে এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলাম।” এ সব কথা আবার অস্বীকার করেছেন অনামিকা। গ্রেফতারির দিন তাঁকে ফোন করে ডেকে আনিয়েছিলেন অনামিকা, অভিযোগ পিঙ্কির। “গলির মুখে এসে দেখি, বাড়ির সামনে পুলিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনামিকা।” এর পরই বাগুইআটি থানার পুলিশ তাঁকে অনামিকার ওপর শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.