রাজা রামমোহনের জন্মভিটে খানাকুলের রাধানগরে তাঁর স্মৃতিসৌধ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় কিছু বিশিষ্টজন চাইছেন রামমোহন রায় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণেই ব্রিস্টলে সমাধি-স্মারকের আদলে সমাধিস্মারক নির্মাণ করতে। অন্য এক দল বিশিষ্ট মানুষের বক্তব্য, ওই চত্বর অবিকল রেখে পাশে কোনও জায়গায় নতুন শিলান্যাস হোক। স্মৃতিসৌধ ও সমাধি-স্মারক পৃথক জায়গায় তৈরি হোক।
এ দিকে, ব্রিস্টলের আদলে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য হুগলি জেলা পরিষদের অনুমতি মিলেছে। বুধবার তারই শিলান্যাসের দিন ঠিক হয়। ইতিমধ্যে, স্মৃতিসৌধ তৈরি নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দেওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার নমো নমো করে সেই অনুষ্ঠান সারা হয়েছে। এ দিন রাধানগরে ‘টেবিল-শিল্যান্যাস’ করেন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী। কিন্তু আমন্ত্রণপত্রে যাঁদের নাম ছাপা হয়েছিল, সেই জেলাশাসক, জেলা সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কেউ-ই অনুষ্ঠানে আসেননি। ‘সময়ের অভাবে’ই তাঁরা হাজির থাকতে পারেননি বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
রাধানগর রাজা রামমোহন স্মৃতিরক্ষা সমিতি সমাধিস্মারক নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু আপত্তি তুলেছে রাজা রামমোহন রায় মেলা কমিটি। স্থানীয় কিছু মানুষের পক্ষেও আপত্তিপত্র জমা পড়েছে।
খানাকুলে রাজা রামমোহন রায়ের সমস্ত সম্পত্তি হুগলি জেলা পরিষদ অধিগ্রহণ করে আশির দশকে। তবে অনেক আগে থেকেই সে-সব সম্পত্তি তত্ত্বাবধান করে স্মৃতিরক্ষা সমিতি। এখনও সেই স্মৃতিরক্ষা সমিতি সক্রিয়। রামমোহন মেলার জন্য পৃথক কমিটি হয়। স্মৃতিরক্ষা সমিতির যুগ্ম সম্পাদক পরেশচন্দ্র দাস এবং রামমোহন রায়ের এক বংশধর বর্তমানে স্থানীয় কাদরা গ্রামের বাসিন্দা অনুপকুমার রায় ওই সমাধিস্মারক নির্মাণের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবেন জানিয়ে হুগলি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের কাছে গত এপ্রিল মাসে আবেদন করেন। গত ১৪ জুন তা নির্মাণের অনুমোদন মেলে। সরকারি এই নির্দেশের পর তাঁরা প্রস্তুতিও নেন।
পরেশচন্দ্র দাস বলেন, “রাজা রামমোহন রায়ের বংশধর অনুপকুমার রায় আমার ছাত্র। সে ব্রিস্টলে গিয়ে রাজা রামমোহন রায়ের সমাধিক্ষেত্রের মৃত্তিকা এনে আমার পরামর্শ চায়। তখনই মাথায় আসে, ব্রিস্টলের সমাধিস্মারকের আদলে রাধানগরে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রামমোহনের জন্মবেদির পাশে সমাধিস্মারক নির্মাণ করার। সরকারি তহবিলের উপরে ভরসা না করে নিজেরাই ব্যয়ভার বহন করার সিদ্ধান্ত নিই। সেই মর্মে অনুমোদনও মিলল। দীর্ঘ দিনের অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ হবে, আশা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আপত্তি তুলে বিকল্প প্রস্তাব পড়েছে। আমরা এই নিয়ে বিভেদ চাই না। সরকারি অনুমোদন মিলেছে। এখন তাঁরাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।”
অন্য দিকে, মেলা কমিটির পক্ষে বিশিষ্ট লেখক, কবি দেবাশিস শেঠ বলেন, “আমরা চাই, স্মৃতিসৌধটি অবিকৃত রেখে রাজার আমবাগানের যে-কোনও পড়ে থাকা অংশেই নতুন নির্মাণ হোক। ব্রিস্টলের মন্দিরটির পরিকল্পনা যেমন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর করেছিলেন, তেমনই রাধানগরের স্মৃতিসৌধটির পরিকল্পনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দু’টি সৃষ্টি পৃথক ভাবে থাকুক ও স্মৃতিভবনটির সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখা হোক। কোনও রকম সংযোজন-বিভাজন বন্ধ করা হোক।” একই কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের পারভেজ রহমান।” মহকুমা শাসক অরিন্দম নিয়োগী জানান, বিষয়টির সিদ্ধান্ত নেবে জেলা পরিষদ। আপাতত নির্দিষ্ট জায়গাতেই স্থায়ী শিলান্যাস না করে, টেবিল-শিলান্যাস করা হল। |