এখন আমন চাষের সময়। চাষিদের ঋণদান, সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন এলাকার কৃষি সমবায় সমিতিগুলির তৎপরতা এখন তুঙ্গে। এই অবস্থায় আরামবাগের পার আদ্রা গ্রামে অবস্থিত ‘দ্বারকেশ্বর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি’-তে রবিবার রাতে তালা মেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই সমবায় সমিতিরই তৃণমূল সমর্থক কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে।
আলু এবং ধান কেনা-সহ নানান দুর্নীতির হিসাব না পেয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তালা মারার ঘটনায় নেতৃত্বে থাকা মীর সরফরাজ হোসেন নামে এক সমিতি সদস্য।
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “বিষয়টি জেলা সমবায় দফতরকে জানানো হয়েছে।”
সমবায় সমিতিটি স্থাপিত হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১১৭ জন। সমবায়ের সিপিএম পরিচালন কমিটির মেয়াদ শেষ হতে এখনও প্রায় এক বছর বাকি। সমিতির সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, গত দু’বছরে কোনও অডিট হয়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর গত এক বছর ধরে অডিটের দাবি তুলে একাধিক বার বিক্ষোভ হয়। যাবতীয় হিসাব দেখাবার দাবি তোলা হয়। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীর কাছে লিখিত ভাবে তদন্তের দাবি তোলা হয় মাস দুই আগে। একই দাবিতে একই দাবিতে সমবায় দফতরের ব্লক পরিদর্শক সুজন দে’র কাছেও অভিযোগপত্র জমা পড়ে।
সেই তদন্তের ফলাফল জানার আগেই কেন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হল?
মীর সরফরাজ হোসেন বলেন, ‘‘তদন্তে গড়িমসির জন্যেই আমরা তালা মারতে বাধ্য হয়েছি। চাষি সদস্যেরা এই অসুবিধা মেনে নিচ্ছেন স্রেফ সমবায়ের স্বচ্ছতা চেয়ে।” তাঁর দাবি, “তালা মারার ঘটনায় তৃণমূল দলের কোনও যোগ নেই। স্বচ্ছতার দাবিতে আমরা যারা আন্দোলনকারী, স্রেফ কাকতালীয় ভাবেই সকলে তৃণমূলের সমর্থক।”
প্রশাসনিক তদন্ত দাবি করার পরেও সাধারণ সদস্যরা রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ হিসাব চেয়ে দিন স্থির করেছিলেন বলে তাঁদের বক্তব্য। সরফরাজ বলেন, “আমাদের বিকেল চারটে নাগাদ সময় দিয়েও পরিচালন কমিটির সম্পাদক স্বপন কার্ফা হাজির হননি। কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন হাজির থাকলেও তাঁর কাছে চাবি ছিল না বলে জানান। রাত ৮টা নাগাদ সম্পাদকের জন্য অপেক্ষা করে, খবর পাঠানো সত্ত্বেও তিনি না আসায় তালা মেরে দিই।”
পরিচালন কমিটির সভাপতি মোসারফ হোসেন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সম্পাদক স্বপন কার্ফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ওঁরা নির্দিষ্ট কোনও সময় দেননি। আমি দেড়টা পর্যন্ত অফিসেই ছিলাম। শরীর অসুস্থ থাকায় পরে আর যেতে পারিনি।”
তালা মারা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “মিথ্যা অভিযোগ তুলে অনৈতিক ভাবে তালা মারা হয়েছে। সমবায়ের নিজস্ব ঘর না থাকায় আমার ব্যক্তিগত ঘরে বিনা ভাড়ায় অফিস চালাচ্ছি। হিসাবপত্র নিয়ে গত ২৩ জুন বার্ষিক সাধারণ সভা হয়েছে। তা ছাড়া, দুর্নীতির অফিযোগ থাকলে সমবায় দফতর তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিক। তার আগে আইন হাতে তুলে নিয়ে সমবায় সমিতিতে তালা মারা হল।”
বুধবারও বন্ধ ছিল সমবায় সমিতি। সমস্ত বিষয়টি নিয়ে আরামবাগ ব্লক সমবায় পরিদর্শক সুজন দে বলেন, “স্থানীয় বাধায় সমবায় সমিতির গুদাম ঘরটিও আটকে আছে। কেন্দ্রীয় সমবায়ের রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পে গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু রং করতে বা বোর্ড লাগাতে দিচ্ছে না। আবার একটি তদন্তাধীন বিষয়ে রিপোর্টের আগেই তালা মারার ব্যাপারটিও মানা যাচ্ছে না। দু’পক্ষকে নিয়ে যথাশীঘ্র সম্ভব আলোচনার টেবিলে বসা হবে।”
এই অবস্থায় চাষিরা কবে স্বাভাবিক পরিষেবা পাবেন, সেটাই প্রশ্ন। |