তৃণমূলে চলে যাওয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের দলে ফেরার ‘ডাক’ দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বুধবার হাওড়ার রানিহাটিতে এক সভায় পাঁচলা বিধানসভা এলাকা থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য মোহিত ঘাঁটি কংগ্রেসে যোগ দেন। হাওড়ার বিভিন্ন পঞ্চায়েতের চার জন উপপ্রধান-সহ ৫ জন পঞ্চায়েত সদস্য এবং ৪ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও এ দিন তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। এঁদের সকলেই কোনও না কোনও সময়ে ছিলেন কংগ্রেস শিবিরে। এই ঘটনাকে ‘দৃষ্টান্ত’ বলে মন্তব্য করে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, “পাঁচলায় এ দিন যা ঘটল, তার প্রভাব সারা বাংলা রাজনীতিতে পড়বে। এই ঘটনা রাজ্যে কংগ্রেসকে শক্তি জোগাবে।”
এ দিনের ঘটনাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতেই নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের উলুবেড়িয়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদ বলেন, “গত বিধানসভা ভোটে পাঁচলায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে ভোটে লড়ায় মোহিত ঘাঁটিকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওঁরা কোথায় গেলেন না গেলেন, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।”
‘দলত্যাগ’ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এ দিন যাঁরা কংগ্রেস যোগ দিয়েছেন, তাঁরা প্রকৃত তৃণমূল কিনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ যে কোম্পানি উঠে যাবে সেখানে কেউ যায় না।” অধীর চৌধুরীর নাম না করেও তাঁকে তৃণমূল নেতার কটাক্ষ, “রুগ্ণ শিল্পে তো ম্যানেজারই বেঁচে থাকে।” যা শুনে অধীরের পাল্টা হুঙ্কার, “এ রাজ্যে কংগ্রেস পুনর্জীবনের প্যাকেজ নিয়ে এসেছে। যা চকচকে তাই সোনা নয়, মানুষের তা বুঝতে হয় তো কয়েক দিন সময় লাগছে। তবে যখন বুঝতে পারবে, তখন কিন্তু মানুষ জাহাজ ছেড়ে পালাবে।” |
এ দিন সভায় অধীরবাবু ছাড়াও ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাসমুন্সি, নির্বেদ রায়, আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র, জেলা কংগ্রেস সভাপতি কাজি আবদুল রেজ্জাক প্রমুখ। এ দিন যাঁরা কংগ্রেসে যোগ দিলেন, তাঁদের উদ্দেশে প্রদীপবাবু বলেন, “আপনারা কংগ্রেসে ফিরে এসে ঠিক কাজই করেছেন। যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের আরও অনেকে ফিরে আসবেন। তাঁদের বলছি, আর দেরি করবেন না, ফিরে আসুন।” রাজ্যে কংগ্রেসের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রদেশ সভাপতি। বস্তুত, এ দিন তৃণমূলের ‘শক্তঘাঁটি’ বলে পরিচিত পাঁচলায় কংগ্রেসের সভায় হাজার দশেকের জমায়েত হয়েছিল। অধীরবাবু বলেন, “পাঁচলা বিধানসভা ও হাওড়া সদর লোকসভা তৃণমূলের দখলে। তা সত্ত্বেও যে ভাবে এত জন মানুষ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে এলেন, তাতে আমার অবাক লাগছে। আসলে তৃণমূলের ঔদ্ধত্য বরদাস্ত করতে না পেরে ওঁরা কংগ্রেসে চলে এসেছেন।”
সিঙ্গুরের চাষিদের সঙ্গে সরকার ‘প্রতারণা’ করেছে বলেও এ দিন মন্তব্য করেছেন অধীর-দীপারা। মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সাংসদের কথায়, “এমন একটা বিল অর্ডিন্যান্স করে পাস করানো হল, যে তাতে চাষিদের জমিই ফেরত দেওয়া গেল না। তৃণমূল নেত্রী যখন জানতেন, জমি ফেরত দেওয়ার কোনও উপায় নেই, তা হলে কেন চাষিদের ধোঁকা দিলেন।”
রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘একলা চলার’ পক্ষে ফের সওয়াল করে হাওড়ার কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশ্য দীপাদেবীর পরামর্শ, “আপনারা একা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন।” প্রদেশ সভাপতির উদ্দেশে অধীর বলেন, “একা লড়াই করলে কংগ্রেস অনেক ভাল ফল করবে। তৃণমূলকে আপনারা অনেক খাতির করেছেন। আমি খাতির করতে নারাজ।” যা শুনে প্রদেশ সভাপতির বক্তব্য, “শুধু আবেগ দিয়ে চিঁড়ে ভিজবে না। প্রতিটি বুথে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। একা লড়াই করার জন্য কব্জির জোর চাই।” এ দিন মঞ্চে উপস্থিত সব নেতাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করেন।
তাঁর কয়েকশো অনুগামীও এ দিন তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বলে মোহিতবাবুর দাবি। তাঁর কথায়, “তৃণমূল মা-মাটি-মানুষের পাশে থাকবে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম সাধারণ মানুষের পাশে তারা নেই। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল সন্ত্রাসের রাজনীতি করছে। এর প্রতিবাদেই ফের ঘরে ফিরে এসেছি।” |