হোমের সম্পাদক-সহ ধৃত ৩
গুড়াপে মাটি খুঁড়ে মিলল আবাসিক মহিলার দেহ
মানসিক ভারসাম্যহীন এক আবাসিক মহিলাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগে হুগলির গুড়াপের এক বেসরকারি হোমের সম্পাদক-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আটক করা হয়েছে হোমের সুপার এক মহিলাকেও। পুলিশের দাবি, মৃত্যুর আগে গুড়িয়া (৩২) নামে ওই মহিলাকে ‘ধর্ষণ’ও করা হয়েছিল বলে তাদের জানিয়েছেন ওই হোমের এক আবাসিক। মৃতদেহ এসএসকেএম হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা জানাজানি হতে শোরগোল পড়ে রাজনৈতিক মহল এবং রাজ্য প্রশাসনেও।
গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি এলাকার ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে ওই হোমের পাঁচিলের পাশে একটি পুকুরের ধার থেকে বুধবার দুপুরে গুড়িয়ার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২ জুলাই গুড়িয়ার দেহ ওই পুকুরের ধারে পুঁতে দেওয়া হয়। ওই মহিলা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে নিয়মমতো চুঁচুড়া সদরের মহকুমাশাসক কস্তুরী বিশ্বাসকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন হোম কর্তৃপক্ষ। তবে কী ভাবে তাঁর সৎকার হয়েছে, সে কথা জানানো হয়নি। মহকুমাশাসকও নিয়মমাফিক বিষয়টি গুড়াপ থানাকে জানান। স্বাভাবিক মৃত্যুর ডাক্তারি শংসাপত্র থাকায় তাদের কোনও সন্দেহ হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রের দাবি।
ধৃত সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু বুধবার ওই হোম সংলগ্ন এলাকা থেকে দুর্গন্ধ বার হতে থাকায় স্থানীয় লোক জন পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ তোলার পরে তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। এর পরই জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক রমা সামন্তের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার এবং মৃতদেহ পোঁতার কাজে সাহায্য করা দু’জনকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোমের সুপার বুলবুল চৌধুরীকেও আটক করা হয়েছে। উদয়চাঁদ অবশ্য খুনের অভিযোগ মানেননি। তদন্তকারীদের বক্তব্য: তিনি বলেছেন, ১ জুলাই দোতলার জানলা থেকে পড়ে মারা যান গুড়িয়া। বাঁকুড়ার এক চিকিৎসকের কাছ থেকে হৃদ্রোগে মৃত্যুর শংসাপত্র আনিয়ে পরের দিন তিনি দেহ মাটিতে পুঁতে দেন। কিন্তু হোমে কারও মৃত্যু হলে সাধারণ ভাবে তো পুড়িয়েই ফেলা হয়। তা হলে গুড়িয়াকে কবর দেওয়া হল কেন? উদয়চাঁদের বক্তব্য, “দেহ থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। গ্রামবাসীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হত।”
জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য কুণাল দে জানান, যে কোনও হেফাজতে থাকা কারও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের সুরতহাল আবশ্যিক। ময়না-তদন্তও হওয়া উচিত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। এ ক্ষেত্রে তা না হলে নিয়মবিরুদ্ধ কাজ হয়েছে। বাঁকুড়ার যে চিকিৎসক শংসাপত্র দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এবং শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এ দিন সন্ধ্যায় ওই হোমে যান। আবাসিকেরা তাঁদের কাছে হোমের ‘অব্যবস্থা’ নিয়ে ক্ষোভ জানান। সাবিত্রীদেবী বলেন, “এই ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব দিক তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ২৩ মে বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ের নির্দেশে মানসিক ভারসাম্যহীন গুড়িয়াকে এই হোমে আনা হয়। গুড়িয়া ছিলেন দোতলার ২৩ নম্বর ঘরে। সেখানে থাকেন আরও এক মহিলা। হুগলি জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “হোমের এক আবাসিকের কাছ থেকে তদন্তকারী অফিসারেরা জেনেছেন, গুড়িয়াকে ধর্ষণ ও মারধর করা হয়। এর পরে ওই মহিলা আত্মহত্যার চেষ্টা করে চোট পান।’’ গুড়িয়া আত্মহত্যা করেছেন, না তাঁকে খুন করা হয়েছে, তা এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এসপি তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ধৃতের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে। তাঁর কয়েক জন সঙ্গীর খোঁজে তল্লাশি চলছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, হোমটির লাইসেন্সের মেয়াদ মার্চেই ফুরিয়েছে। তা পুনর্নবীকরণ করা হয়নি।বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “ঘটনাটি নিন্দাজনক। কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার গুড়াপে যাবেন। নিরপেক্ষ তদন্ত চাইব ঠিকই, কিন্তু এই সরকার সেটা করতে পারে বলে আমাদের মনে হয় না।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তোলায় তৃণমূল নেতৃত্ব ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আজ তাঁরা কী বলবেন! এই ঘটনা অন্য কোনও সরকারের আমলে ঘটলে এবং তৃণমূল বিরোধী আসনে থাকলে কী হত?” দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে চুঁচুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় জেলা বিজেপি। আজ, বৃহস্পতিবার বামফ্রন্ট পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.