লায়লা খান নিখোঁজ কাণ্ড
বলিউড চিত্রনাট্যকে হার মানিয়ে উদ্ধার ৬টি কঙ্কাল
ন্দেহ অনেক দিন ধরেই দানা বাঁধছিল। মঙ্গলবার রাতে নাসিকের ইগাতপুরী বাংলোর চত্বর থেকে ছ’টি কঙ্কাল উদ্ধার করার পর মুম্বই পুলিশের অনুমান, খুনই হয়েছেন নিখোঁজ পাক বংশোদ্ভূত বলিউড অভিনেত্রী লায়লা খান ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। আর যে ভাবে কাশ্মীরের একটি পরিত্যক্ত গাড়ির তদন্তে নেমে লায়লা খুনের রহস্যভেদ হল বলে মনে করা হচ্ছে, তা বলিউডের টানটান রহস্য চিত্রনাট্যকেও অনায়াসে হার মানিয়ে দেবে।
আজ বিকেলে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) হিমাংশু রায় জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য দেহাংশগুলি পাঠানো হয়েছে। কঙ্কালগুলি লায়লা ও তাঁর পরিবারের অন্যদের কি না তা নিশ্চিত হতে লায়লার বাবা তথা তাঁর মা সেলিনার প্রথম স্বামী নাদির শাহ পটেলকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে।
হিমাংশু জানান, লায়লার সৎ বাবা পারভেজের কথামতো ইগাতপুরী বাংলোর সামনের চত্বরের মাটি খুঁড়ে যে ছ’টি কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে একটি মাত্র পুরুষের কঙ্কাল ছিল। লায়লা ও তাঁর পরিবারের নিখোঁজ সদস্যদের মধ্যেও তাঁর ভাই ছাড়া সবাই মহিলা। কঙ্কালগুলি দু’টি থাকে সাজানো ছিল। নীচের থাকে তিনটি কঙ্কাল রক্তমাখা তোষক ও বালিশ দিয়ে মোড়া ছিল। এর পরে তা পাথর ও মাটি দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল। পরের থাকে একই ভাবে আরও তিনটি কঙ্কাল চাপা দেওয়া ছিল। পুলিশের অনুমান, কোনও পশু যাতে দেহগুলি খেতে না পারে তাই এ ভাবে সেগুলিকে চাপা দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা লোহার রড ও দু’টি ছুরিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। কয়েকটি দেহে সোনার গয়নাও ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনটি কঙ্কালের মাথায় গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
জুন মাসে কিশতওয়ার থেকে কালো রঙের একটি পরিত্যক্ত মিতসুবিশি ল্যান্ড রোভার উদ্ধার করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। তাদের সন্দেহ ছিল ২৬/১১-র মুম্বই হামলায় এই গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই গাড়িটির মালিকের সন্ধান করতে গিয়েই জানা যায়, গাড়িটি লায়লা খানের নামে রয়েছে। আর লায়লা খানের খোঁজ করতে গিয়েই একে একে সামনে আসে সব রহস্য। জানা যায়, ২০১১-র ফেব্রুয়ারি থেকেই নিখোঁজ লায়লা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আর পেশায় রাস্তা তৈরির ঠিকাদার পারভেজ তাককে সেই গাড়িটি শেষ চালাতে দেখা গিয়েছিল। যে আবার লায়লার সৎ বাবাও। এর পরেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
লায়লা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র দেখাচ্ছেন মুম্বই পুলিশের অফিসারেরা। বুধবার। ছবি: পি টি আই।
তাদের দাবি, জেরার মুখে সেলিনার তৃতীয় স্বামী পারভেজ তাক স্বীকার করেছে, রাগের মাথায় লায়লা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুন করেছে সে। পুলিশকে পারভেজে জানিয়েছে, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে লায়লা ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সে-ও ইগাতপুরী বাংলোয় ছুটি কাটাতে যায়। ঘটনার দিন, গভীর রাত পর্যন্ত বাংলোয় সবাই মিলে নাচ-গান, খাওয়া দাওয়া করেছিল। এর পরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সেলিনার সঙ্গে পারভেজের বাদানুবাদ হয়। পারভেজের বয়ান অনুযায়ী, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরেও দ্বিতীয় স্বামী আসিফ শেখের সম্পর্ক ছিল সেলিনার। এমনকী, আসিফকে সম্পত্তির কেয়ারটেকার করার কথাও ভাবছিলেন সেলিনা। এ ছাড়া লায়লা ও তাঁর পরিবার দুবাইয়ে পাকাপাকি থাকার পরিকল্পনা করছিলেন বলেও পারভেজের দাবি। কিন্তু পারভেজের পাসপোর্ট না থাকায় তার পক্ষে দুবাই যাওয়া সম্ভব ছিল না। এই ঘটনায় পারভেজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। এই নিয়ে সেলিনার সঙ্গে বাদানুবাদ হওয়ার সময়ে রাগের মাথায় পারভেজ সেলিনাকে লাঠি দিয়ে মারে বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই মারা যান সেলিনা। চিৎকার চেঁচামেচিতে অন্যদের ঘুম ভেঙে যায়। তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে একে একে লায়লা, তাঁর দুই বোন, এক ভাই এবং ছুটি কাটাতে ওই বাংলোয় আসা লায়লার আরও এক সম্পর্কিত বোনকেও মেরে ফেলে পারভেজ। পুলিশের দাবি, এই খুনে পারভেজকে সাহায্য করে তার পূর্ব পরিচিত কাশ্মীরের বাসিন্দা শাকির হুসেন। ঘটনার দু’মাস আগে ওই বাংলোর চৌকিদার হিসেবে যাকে নিয়োগ করে পারভেজ স্বয়ং। শাকিরকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তবে সাংবাদিকদের হিমাংশু জানিয়েছেন, পারভেজের সব কথাই ধ্রুব সত্য বলে মেনে নিচ্ছে না পুলিশ। কারণ, তাদের সন্দেহ, পরিকল্পনা ছাড়া শুধু রাগের মাথায় এ ভাবে কোনও চিহ্ন না রেখে এতগুলো মানুষকে খুন করার ঘটনা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ ছাড়া, আগেও পুলিশকে নানা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও করেছিল পারভেজ। অন্য দিকে আসিফকেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখছে না পুলিশ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.