|
|
|
|
হামিদের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রীই, বলছে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি কি উপরাষ্ট্রপতি পদে হামিদ আনসারির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিল? কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের অন্তত তেমনটাই মত।
কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ১৪ জুলাই ইউপিএ-র বৈঠকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজে মমতাকে ফোন করেন ঠিকই। কিন্তু তাই বলে মমতার পছন্দের লোককে প্রার্থী করা হবে, এমনটা মনে করার কারণ নেই। বরং মমতা সংঘাতে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পরে হামিদ আনসারির ফের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো হল। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে।
তা ছাড়া, হামিদ আনসারির নাম চূড়ান্ত না হওয়া সত্ত্বেও মমতা যে ভাবে তাঁর বিরোধিতা করে পাল্টা প্রার্থী দিতে চাইছেন, সেটাও ভাল চোখে দেখছেন না কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁরা মনে করছেন, মমতা চাপের রাজনীতি করছেন। কিন্তু সেই চাপের কাছে নতি স্বীকারের কোনও প্রশ্ন নেই। আর সেটা দেখাতে গেলে আনসারিকেই প্রার্থী করা ছাড়া পথ থাকছে না।
আনসারি-প্রশ্নে কংগ্রেস যে অবস্থান দৃঢ় করছে, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে মনমোহন আজ সিপিআই-এর দুই শীর্ষ নেতা এ বি বর্ধন ও সুধাকর রেড্ডিকে ফোন করায়। তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনেও আনসারিকে প্রার্থী করার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
উপরাষ্ট্রপতি ভোটে মনোনয়ন পেশের শেষ দিন ২০ জুলাই। তার আগের দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সুতরাং রাষ্ট্রপতি ভোটের আগেই উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী ঘোষণা করে দিতে হবে। সম্ভবত ১৪ জুলাই ইউপিএ-র বৈঠকে সেই ঘোষণা করা হবে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক বর্ষীয়ান সদস্যের কথায়, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ঝুঁকি নিয়ে কংগ্রেস খামোকা রাষ্ট্রপতি ভোটের অঙ্ক গুলিয়ে ফেলতে চাইছে না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে শাসক জোটের অধিকাংশ শরিক-সমর্থকের পাশাপাশি সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বাম দল এবং এনডিএ-র শরিক সংযুক্ত জনতা দল, শিবসেনা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও সমর্থন জানাচ্ছে। ফলে কংগ্রেস উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমন কারও নাম প্রস্তাব করতে চায় না, যাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সমীকরণের উপর তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।
সে দিক থেকেও হামিদ আনসারি ‘নিরাপদ’ নাম। তাঁকে নিয়ে এনসিপি বা ডিএমকে-র মতো ইউপিএ শরিকের কোনও আপত্তি নেই। আবার গত নির্বাচনে আনসারি তাদেরই প্রার্থী ছিলেন বলে চার বাম দলও তাঁকে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত। নীতীশ কুমারও আনসারিকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে এনডিএ শিবিরে আরও এক বার ভাঙন ধরানোর সুযোগ থাকছে কংগ্রেসের সামনে। সমস্যা শুধু মুলায়ম সিংহ যাদব। রাষ্ট্রপতি পদে আনসারির প্রার্থীপদ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেসের একটা অংশের মতে, উত্তরপ্রদেশকে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার পরে মুলায়ম আর বেঁকে বসবেন না।
বাকি রইলেন মমতা। তৃণমূল সূত্রের খবর, শনিবার ইউপিএ-র বৈঠকে তাদের পাল্টা প্রার্থী হিসেবে গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর নাম জানিয়ে দেবেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের মতে, তৃণমূল নেত্রী ভালই জানেন যে, পাল্টা প্রার্থী দিলেও তাঁর জয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই। আর সে ক্ষেত্রে গোপাল গাঁধী আদৌ প্রার্থী হতে রাজি হবেন কিনা, সেটাও প্রশ্ন!
শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক না কেন, মমতার এই ‘বিদ্রোহে’ উৎসাহিত বিজেপি শিবির। বিজেপি-র মধ্যে থেকে নাজমা হেপতুল্লা, যশোবন্ত সিংহের মতো অনেকেই প্রার্থী হতে চাইছেন। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন যে, তাঁদের কাউকে প্রার্থী করলে এনডিএ-র অনেকেই রাজি হবেন না। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন তুলে পিছিয়ে যাবেন নবীন পট্টনায়ক, জয়ললিতার মতো নেতা-নেত্রীরাও।
বরং তৃণমূল প্রার্থী দিলে বিজেপি-র সুবিধা। তাতে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলীয় কোন্দল এড়ানো যাবে। আবার কংগ্রেসকেও অস্বস্তিতে ফেলা যাবে। বস্তুত বিজেপি নেতারা আজ থেকেই মমতার প্রস্তাব করা দুই প্রার্থী গোপাল গাঁধী ও কৃষ্ণা বসুর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুরু করেছেন। সূত্রের খবর, তৃণমূলকে ইতিমধ্যে বার্তাও দিয়েছেন তাঁরা। বিজেপি-র এই কৌশল সম্পর্কে সম্যক অবহিত কংগ্রেস। দলের একটি অংশের মতে, তৃণমূলকে উপেক্ষা করা হয়েছে এই বার্তা যাতে না যায়, সেই জন্যই মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন মনমোহন। তাঁকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গে রাখার চেষ্টাই হবে কংগ্রেসের পাল্টা রণকৌশল। তবে মমতাকে না পাওয়া গেলেও তাঁরা যে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন, তা-ও আজ জানিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য দলীয় তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কংগ্রেস মন্ত্রী। তিনি বলেন, তৃণমূলকে বাদ রেখেই উপরাষ্ট্রপতি ভোটের অঙ্ক কষা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো এই ভোটে বিধায়কদের কোনও ভোট নেই। কেবল সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে ৭৯০ জনের ভোটাধিকার রয়েছে। যার মধ্যে তৃণমূলকে বাদ দিয়েও সাড়ে চারশোর বেশি ভোট ইউপিএ প্রার্থী পাবেন বলে কংগ্রেসের আশা। |
|
|
|
|
|