|
|
|
|
ফোনে কথা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, শনিবার ইউপিএ-র বৈঠকে যাবেন মুকুল |
গোপালকেই প্রার্থী করতে অনড় মমতা |
অনিন্দ্য জানা • গরুমারা |
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী যে গোপালকৃষ্ণ গাঁধী, আপাতত ইউপিএ-কে তা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়ারই পক্ষপাতী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী শনিবার নয়াদিল্লিতে ইউপিএ-র বৈঠক ডাকা হয়েছে। পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নিয়ে তাতে আলোচনা হবে। সেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে বুধবার রাতে মমতাকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং। মমতা তাঁকে জানিয়েছেন, বৈঠকে তৃণমূলের তরফে রেলমন্ত্রী মুকুল রায় যোগ দেবেন। একই সঙ্গে উপরাষ্ট্রপতি পদে তাঁর পছন্দের নামটিও মমতা এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
অতএব আগামী দু’দিনে পরিস্থিতির ‘নাটকীয়’ কোনও বদল না-হলে ইউপিএ-র বৈঠকে মুকুল কংগ্রেসের প্রার্থী হামিদ আনসারির নাম শুনবেন এবং বলবেন, তৃণমূলেরও একটি নামের ‘প্রস্তাব’ রয়েছে। গোপালকৃষ্ণ গাঁধী।
মমতা যে ইউপিএ-র বৈঠকে মুকুলকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা থেকে তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, দু’পক্ষের মধ্যে হয়তো ‘বরফ গলছে’। বুধবার, উত্তরবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিন বিকেলে মমতার কাছে নয়াদিল্লি থেকে বার্তা আসে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু মমতা তত ক্ষণে কোচবিহার ছেড়ে ডুয়ার্সের বনাঞ্চলে ঢুকে পড়েছেন। একে জঙ্গল, তার উপর দুর্যোগে মমতার মোবাইলে সিগন্যাল যাওয়া-আসা করছে। তখন মমতা সিদ্ধান্ত নেন, গন্তব্যে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কিন্তু যত ক্ষণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করার মতো অবস্থায় পৌঁছন, তত ক্ষণে আবার প্রধানমন্ত্রী চলে গিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে হায়দরাবাদ হাউসে। ফলে বেশি রাতে মমতা-মনমোহন কথা হয়।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হামিদ আনসারি কংগ্রেসের প্রার্থী হলে মমতা যে তাঁকে সমর্থন না-করার কথা ভাবছেন, এ দিন তা জানাজানি হতেই মনমোহন ‘তৎপর’ হয়েছেন। দলের এক গুরুত্বপূর্ণ সাংসদের কথায়, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আমাদের নেত্রী এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টা জানাজানি হওয়ার পরই কংগ্রেস সম্ভবত নড়েচড়ে বসেছে।” ওই নেতাই আবার জানাচ্ছেন, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মনমোহন যদি তৃণমূল বা মমতার সঙ্গে আলোচনা করলেও এই ‘তথ্য’ ভুলে যাওয়ার প্রশ্ন নেই যে, তিনি আগে প্রকাশ কারাটকে ফোন করেছেন।
তৃণমূল-শিবিরের একাংশের বক্তব্য, শনিবারের বৈঠকে মুকুলকে পাঠিয়ে মমতা এই ‘বার্তা’ই দিতে চাইছেন যে, তাঁরা ইউপিএ-র সঙ্গে রয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের ‘প্রস্তাব’ মুকুল ইউপিএ বৈঠকে জানাবেন। দলের রাজ্যসভা সাংসদ কুণাল ঘোষের কথায়, “রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এখনও দলনেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে তিনি মুকুল রায়কে বৈঠকে পাঠাচ্ছেন। আমাদের কাছে সমস্ত রাস্তাই খোলা রয়েছে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নেত্রীর নির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। মুকুলবাবু তা বৈঠকে জানাবেন।” প্রস্তাবটি কী, তা অবশ্য কুণাল বলতে চাননি।
ঘটনাচক্রে, ইউপিএ বৈঠকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশিই আজ, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ফরওয়ার্ড ট্রেডিং সংক্রান্ত যে আলোচ্যসূচি রয়েছে, তাতেও মুকুলকে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা (মুকুল অবশ্য উত্তরবঙ্গে থাকায় ক্যাবিনেট বৈঠকে থাকতে পারছেন না। তা রেলমন্ত্রীর তরফে ফ্যাক্স বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে এ দিনই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে)। কারণ, মমতা মনে করেন, ফরওয়ার্ড ট্রেডিংয়ের ফলে মধ্যসত্ত্বভোগী বা ফড়েদের আরও বাড়বাড়ন্ত হবে। মূল্যবৃদ্ধি লাগাম ছাড়াবে। যা আপাতত মমতার কাছে যথেষ্ট ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়। এতটাই যে, উত্তরবঙ্গ সফরে এসেও মমতা প্রতিদিন কলকাতা এবং সন্নিহিত বাজারের শাকসব্জির দর সম্পর্কে খোঁজ রাখছেন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পক্ষে ফরওয়ার্ড ট্রেডিং নিয়ে কোনও ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্তের শরিক হওয়া কঠিন। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কংগ্রেস ক্যাবিনেটে ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যে তা হতে দেবেন না। যেমন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি হতে দেননি।”
ফলে এটা স্পষ্ট যে, কংগ্রেসের সঙ্গে নরমে-গরমে একটা সংঘাতের বাতাবরণ মমতা আপাতত রেখে যেতে চাইছেন। তৃণমূলের একাংশ যদিও একান্ত আলোচনায় জানাচ্ছে, ইউপিএ বা কংগ্রেসের সঙ্গে এখনই চূড়ান্ত সংঘাতে যাওয়ার পক্ষপাতী নয় দল। ১৮ জুলাই, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগের দিন, দলের সমস্ত সাংসদ-বিধায়ককে কলকাতায় হাজির হওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা থেকেও তারা মনে করছে ভোট দিতেই দলের জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। এবং তা দিলে শেষ পর্যন্ত প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, বিজেপি-র সঙ্গে মিলে সংমাকে ভোট দেওয়া মমতার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই তৃণমূলের এই অংশের মত। এই নেতাদের আরও অভিমত, কেন্দ্রের সরকার এখনও দেড়-দু’বছর চলবে। এখন সরকার বা জোট ছেড়ে এলে রাজ্য চালাতে অসুবিধা হবে। সরকার যদিও বা ছাড়তে হয়, তা ছাড়তে হবে লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে। কোনও একটি ‘জনমুখী’ প্রশ্নে। এখন সেই সময় নয়।
তবে উপরাষ্ট্রপতি পদে গোপালকৃষ্ণের নাম নিয়ে মমতা যে যথেষ্ট ‘সিরিয়াস’, এ দিন মনমোহনের সঙ্গে তাঁর কথাতেও তা বোঝা গিয়েছে বলে দলীয় সূত্রের দাবি। এক নেতার কথায়, “ওঁর চেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী কি আর দেশে এই মুহূর্তে আছে নাকি?” দলীয় সূত্রের আরও খবর, মমতা ইতিমধ্যেই গোপালকৃষ্ণের সঙ্গে প্রাথমিক কথাও বলেছেন। ওই তরফ থেকে ‘আপত্তি’র ইঙ্গিত মেলেনি। উপরন্তু, বিজেপি-র নেতারা গোপালকৃষ্ণকে সমর্থন করতে পারেন জেনে মমতা খানিকটা ‘উৎসাহী’। সে ক্ষেত্রে তিনি আব্দুল কালামের মতোই গোপালকৃষ্ণের নামও ‘অরাজনৈতিক ও সর্বসম্মত’ প্রার্থী হিসেবেই প্রস্তাব করতে পারবেন।
মমতা-মনমোহন কথার পরে এখন দেখার, এই স্নায়ুযুদ্ধে কে আগে পলক ফেলেন। |
|
|
|
|
|