পুঁজির জোগাড় পরে, ঘুরে দাঁড়ানোই এখন
পাখির চোখ হলদিয়া পেট্রোকেমের
পুঁজি নয়। রুজি।
এই মুহূর্তে আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার উপরই সব থেকে বেশি জোর দিতে চায় হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল)। শেয়ার বেচে পুঁজি জোগাড়ের চিন্তা তার পরে। অগ্রাধিকারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে।
মঙ্গলবার মহাকরণে এই দাবি করেছেন শিল্পমন্ত্রী তথা এইচপিএলের চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অর্থাৎ, ইঙ্গিত স্পষ্ট। সম্প্রতি পেট্রোকেমে শেয়ারের বিনিময়ে টাকা ঢালার যে আগ্রহ ওএনজিসি-র শাখা সংস্থা ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস দেখিয়েছিল, এখনই তা নিয়ে আর এগোচ্ছে না রাজ্য। বরং মন দিচ্ছে আগে সংস্থার আর্থিক ভিত মজবুত করার উপর।
নতুন করে লগ্নি না-এলে যেখানে এইচপিএলের টিকে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত কেন? শিল্পমন্ত্রীর যুক্তি, সংস্থার আর্থিক দশা এখন বেহাল। এই পরিস্থিতিতে শেয়ার বেচে তড়িঘড়ি পুঁজি জোগাড়ের চেষ্টা করলে, শেয়ার-পিছু ভাল দাম মিলবে না। আর সেই কারণেই সংস্থাকে আগে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে চান তাঁরা। উল্লেখ্য, আগে এই একই কারণে পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে আরও শেয়ার বিক্রির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তার থেকে পিছিয়ে এসেছিল পূর্বতন বাম সরকার। আর্থিক হাল খারাপ হওয়ায় শেয়ারের দাম ভাল পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা ছিল তাদেরও। অবশ্য চাইলেও এইচপিএলের শেয়ার বিক্রি করে লগ্নি আনা কতটা সম্ভব হত, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়ে। কারণ, এ বিষয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে শরিকি মামলার কারণে।
তবে এখনই নতুন করে লগ্নিকারীর খোঁজ না-করলেও, সংস্থা পরিচালনা নিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসছে না রাজ্য সরকার। পার্থবাবু স্পষ্ট জানিয়েছেন, এইচপিএলের এই দুঃসময়ে রাজ্য তার হাত ছাড়বে না ঠিকই। কিন্তু পরে অবশ্যই বিবেচনা করবে যে, এই সংস্থা পরিচালনার সঙ্গে আদৌ কত দিন যুক্ত থাকবে তারা।
সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর পথ খুঁজতে এ দিন মহাকরণে এইচপিএলের পরিচালন পর্ষদের সদস্য এবং শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিল্পমন্ত্রী। তার পরই তিনি জানান, সব থেকে আগে নগদ আয় বাড়া জরুরি। দেখতে হবে, যাতে বিক্রি থেকে আয়ের অঙ্ক অন্তত লগ্নির তুলনায় বেশি হয়। সংস্থাকে মুনাফার মুখ দেখানোর প্রথম শর্ত এটিই। তাঁর দাবি, এই শর্ত পূরণ হলেই চাকা ঘুরতে শুরু করবে এইচপিএলের। তখন শেয়ার বিক্রি করলে বরং ভাল দাম মিলবে। অনেক সহজ হবে বিনিয়োগ টানা। মন্ত্রীর কথায়, “আগে আমাদের সবল হতে দিন। দুর্বলের দিকে কেউ তাকায় না। সবল হলে সবাই আসবে।”
কী ভাবে সংস্থা ‘সবল’ হবে, তার রূপরেখাও এ দিন তুলে ধরেছেন পার্থবাবু। তিনি জানান, কারখানার পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ঘণ্টায় ২৫০ টন। এত দিন তা ১৪০-এ নেমে গেলেও সম্প্রতি কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টনে। চলতি মাসেই তা পৌঁছবে ২২০ টনে। তার পর যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন তাঁরা। শিল্পমন্ত্রীর মতে, উৎপাদন বাড়লে জুলাইয়েই কর, সুদ ও যন্ত্রপাতির মেরামতি খাতে খরচ মেটানোর আগের ধাপে অন্তত ২০ কোটি টাকা লাভ করবে এইচপিএল।
আর এই কারণেই কারখানার পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এত দিন লাভজনক না-হওয়ায় তা করতে পারেনি এইচপিএল। কিন্তু এখন বিশ্ব বাজারে ন্যাপথার দাম কমেছে। অথচ পণ্যের দাম কমেনি। তাই উৎপাদন বাড়ালে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে লাভের মুখ দেখার। এর জন্য সব যন্ত্রপাতি উপযুক্ত কি-না তা যাচাই করতে উপদেষ্টা নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থার পরিচালন পর্ষদ। শীঘ্রই এ জন্য আগ্রহপত্র চাইবে তারা।
কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে তো চাহিদা বাড়বে কাঁচামাল ন্যাপথারও। অথচ এই ন্যাপথা কেনার সামর্থ নেই বলেই উৎপাদন কম করতে বাধ্য হচ্ছিল সংস্থা। তা হলে এখন ন্যাপথা কেনার টাকা আসবে কোথা থেকে? বিশেষত যেখানে এই খাতে এখনই অন্তত ৩০০ কোটি টাকা জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
শিল্পমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন পথ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেমন, আইওসি মাসে অতিরিক্ত ১৫ হাজার টন ন্যাপথা দিতে সম্মত হয়েছে। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, আমদানি খরচ কমাতে কুয়েত কিংবা আবুধাবির পরিবর্তে আরও বেশি কাঁচামাল জোগাড়ের চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় সংস্থার কাছ থেকে। কাঁচামাল কিনতে অর্থ জোগাড়ের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছে ঋণও চেয়েছে এইচপিএল। তবে এ নিয়ে এ দিন মুখ খোলেননি শিল্পমন্ত্রী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.