সফরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী
ভারতের লক্ষ্মী-লাভে উদ্যোগী বাঙালি জুটি
বিরাট বাণিজ্য-প্রতিনিধি দল নিয়ে নয়াদিল্লিতে এসেছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হিয়েন লুং। বিভিন্ন বণিক সভার প্রতিনিধি, শিল্পসংস্থা, শিল্পপতিদের সঙ্গে আজ দফায় দফায় বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর দিশা খোঁজা হয়েছে।
গোটা উদ্যোগটির মুখ্য কারিগর কিন্তু এক বঙ্গ-জুটি। বাঁড়ুজ্জ্যে এবং মুখুজ্জ্যে!
তালতলায় বড় হওয়া প্রসূন মুখোপাধ্যায় মধ্য কলকাতাকে চেনেন হাতের তেলোর মতো। তাঁর কাছে একই রকম পরিচিত সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য-মানচিত্রটিও। ইউনিভার্সাল সাকসেস-এর (যার সদর দফতর সিঙ্গাপুরে) কর্ণধার এবং আপাদমস্তক বাঙালি প্রসূনবাবু, হিয়েন লুং-এর বাণিজ্য প্রতিনিধি দলটির ‘প্ল্যাটিনাম স্পনসর’। অর্থাৎ সিঙ্গাপুরের যে তিরিশটি শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা এসেছেন নয়াদিল্লিতে, তার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছে তাঁর সংস্থা। আর প্রাইসওয়াটার হাউস কুপার্সের এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান তথা সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন-এর ভাইসচেয়ারম্যান গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে। ছ’বছর বয়সে কলকাতা ছেড়ে মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন গৌতমবাবু, তারপর ন’বছর লন্ডনে কাটিয়ে এখন সিঙ্গাপুরেই থিতু। কিন্তু দীর্ঘ প্রবাস তাঁর বাংলা উচ্চারণে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। বলেন, “দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে এখন প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে উঠেছে। আমি চাই, যে পরিবর্তন পশ্চিমবঙ্গে এসেছে তাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বাজারে নিজেকে ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরুক রাজ্য।”
বৈঠকে প্রসূন মুখোপাধ্যায় ও গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা
তবে চলতি সফরে কোনও বিশেষ রাজ্য নয়, গোটা দেশের বাণিজ্য পরিস্থিতি উন্নয়নই লক্ষ্য বাঁড়ুজ্জ্যে-মুখুজ্জ্যে জুটির। প্রসূনবাবু বলছেন, “পরিকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ব্যাঙ্কসব ক্ষেত্রেই ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুঘটকের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সেই কাজটিই করতে চাইছি। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী-ও এই সফরে এসেছেন। উনি তামাসেক নামে ৫০ হাজার কোটি ডলারের একটি লগ্নি তহবিলের চেয়ারম্যান। আমরা চাইছি ভারতীয় সংস্থাগুলি এই তহবিলের সুযোগ নিক।” গৌতমবাবুর কথায়, “এই বাণিজ্যদলকে এখানে নিয়ে এসে একটি বার্তা দিতে চাওয়া হচ্ছে যে ভারতকে আর অবজ্ঞা করা চলবে না। সার্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কায় অবশ্যই ভারত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কিন্তু এ কথাও ঠিক যে ভারতীয় অর্থনীতির মৌলিক ভিতগুলি এখনও চাঙ্গা রয়েছে।”
আজ সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন (এসবিএফ) এবং ফিকি বাণিজ্যক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে তাদের সমঝোতাপত্র পুনর্নবীকরণ করেছে। এসবিএফ-এর পক্ষ থেকে চুক্তিপত্রে সই করেছেন গৌতমবাবু। আজকের যৌথ বৈঠকে তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ভারতের জন্য যথেষ্ট কঠিন সময় গিয়েছে, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের প্রশ্নে ভারত এখনও সমান গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। এখানে রয়েছে বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণি, বৃহৎ যুব জনগোষ্ঠী, সক্রিয় বেসরকারি সংস্থা। সিঙ্গাপুরের সংস্থাগুলিও ভারতে ব্যবসা করার জন্য উন্মুখ। চলতি উদ্যোগগুলির পাশাপাশি বাণিজ্যের নতুন ক্ষেত্র খতিয়ে দেখতেও তারা আগ্রহী। আর যে সব ভারতীয় সংস্থা এশিয়ার বিশাল বাজারে পৌঁছতে চায় তাদের জন্য সিঙ্গাপুরও আকর্ষণীয় স্থান।”
সম্প্রতি গুজরাতে প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ইউনিভার্সাল সাকসেস দশ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নয়াচরে সিঙ্গাপুরের জুরং সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ গড়তে চান। সেখানে পর্যটন-কেন্দ্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। আজ ভারতীয় বণিকসভাগুলির সঙ্গে বৈঠকে ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজটিই সারতে চেয়েছেন প্রসূনবাবু। তিনি বলেন, “ভারতের যে কোনও শহর থেকে পাঁচ ঘণ্টার উড়ানে সিঙ্গাপুরে পৌঁছানো যায়। এই সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.