নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
এক দিকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে প্ল্যাকার্ড নিয়ে জেলায় জেলায় র্যালি, মিছিল হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে অল্প বয়সে বিয়ে নয়, এই বয়সে শুধু পড়াশোনা করতে হয়। আবারও কোনও প্ল্যাকার্ডে উল্লেখ রয়েছে মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, ১৯ বছরের আগে মা নয়। অথচ এ দিনই রামপুরহাট শহরের একটি মন্দিরে দুই নাবালক ও নাবালিকার মধ্যে মালাবদল হয়। প্রশাসন সেখানে গিয়ে বিয়ে আটকাল।
ঘটনাটি রামপুরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীফলা এলাকার। রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয়ের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি এলাকাবাসীর একাংশ ওই নাবালক-নাবালিকাকে ঘিরে রয়েছেন। পাত্রের বয়েস ১৫ বছর ও পাত্রীর বয়েস ১৪। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগে ওদের মালাবদল হয়ে যায়। কিন্তু আইনের চোখে ওদের বিয়ের বয়েস হয়নি। তাই এই বিয়ে বৈধ নয়।” পুলিশ নাবালক পাত্র-পাত্রীর বাবা ও মা’কে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাদের জন্য নিয়ে যায়। পাশাপাশি ওই নাবালক-নাবালিকাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্য এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হরেকৃষ্ণ মাল, রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও আব্দুল মান্নানও ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাট ১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীফলা এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকার তিন ভাইবোন। বাবা রিকশা চালক। সাত বছর আগে ওই নাবালিকার মা মারা গিয়েছেন। ওই নাবালিকার বাবা বলেন, “দু’মাস আগে ছেলে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। এখনও খোঁজ নেই। বড় মেয়ে ও ছোট মেয়ে জেঠিমার বাড়িতে থাকে। ভাল ছেলের খোঁজ পাওয়ায় বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলাম। বয়েস নিয়ে ভাবিনি।” জেঠু-জেঠিমা বলেন, “মেয়েটার নীচে আরও একটা বোন থাকায় আমরা ওর বিয়ে নিয়ে উদ্বেগে ছিলাম। ঝাড়ধণ্ডের পিনারগড়িয়া এলাকার ওই পাত্রপক্ষ কোনও যৌতুক ছাড়াই আমাদের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়। আমাদের অভাবের সংসার হওয়ায় আর দ্বিতীয়বার ভাবিনি।” তাঁরা জানান, বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে কনের বিয়ের কাপড় কেনা হয়েছিল। বিয়ের আসর বসেছিল শিব মন্দিরে। পাত্রের বাবা বলেন, “আমার ছেলে পাথর খাদানে কাজ করে। মেয়ে পক্ষের দারিদ্র দেখে সে বিনা পণে বিয়ে করতে চায়।” তবে বিয়ের বয়েস হওয়ার আগেই কেন বিয়ে ঠিক করেছিলেন, সে জবাব তিনি দিতে পারেননি। তবে বাসিন্দাদের একাংশ জানান, কম বয়েসে বিয়ে ছেলেমেয়ে দু’জনের পক্ষেই ক্ষতিকর। তাই প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়েছিল। আমরা চাই ওরা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে প্রশাসন ফের ওদের এক সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করুক। প্রশাসনের এক আধিকারিকও বলেন, “আমরাও তাই চাই, বিয়ের বয়েস হওয়ার পরে ওরা একসঙ্গে থাকুক। প্রশাসন সে ব্যাপারে প্রয়োজনে সাহায্য করবে।” |