হাড়গোড়ের সঙ্গে পাওয়া ছাইরঙা জামার টুকরো দেখে সেগুলি তাঁর বাবার বলে দাবি করলেন ‘নিখোঁজ’ কংগ্রেস কর্মী নিমাই সাহার ছেলে।
মঙ্গলবার বিকেলে কাটোয়ার কৈথন গ্রামের উত্তর মাঠে একটি পুকুর পাড়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে পুলিশ। বুধবার কাটোয়া থানায় গুসুম্বা গ্রামের বিশ্বজিৎ সাহা ওই হাড়গুলি তাঁর বাবা নিমাই সাহার (৫১) বলে দাবি করেন। কাটোয়ার ওসি সনৎ দাস বলেন, “আমরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাড়গুলো ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি।”
গত বছর ২৬ অগস্ট ‘নিখোঁজ’ হন কংগ্রেস কর্মী নিমাই সাহা। তাঁর বাড়ির লোক ও কংগ্রেসের অভিযোগ, তাঁকে খুন করে দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। এরই পাল্টা হিসেবে ২৭ অগষ্ট খুন হন সিপিএম সমর্থক নারায়ণ দাস (৩৮)। পুলিশ জানিয়েছিল, পাশের ধরমপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে নিমাইবাবু নিখোঁজ হন। ওই দিন রাতে খোঁজার সময়ে দেখা যায়, তালবোনা পুকুর পাড়ে রক্ত ছড়িয়ে আছে। এক পাটি কালো চটি আর মিষ্টিও পড়ে থাকতে দেখা যায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সিপিএমের দুষ্কৃতীরা নিমাইবাবুকে খুন করে দেহ লোপাট করে দেয়। এ নিয়ে পুলিশের কাছে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। পুলিশ কুকুর আনে, পুকুরে জাল ফেলে। তবে দেহ পাওয়া যায়নি। নিমাইবাবুর ভাই শান্তনু সাহা গুসুম্বা ও অর্জুনডিহি গ্রামের ২১ জনের বিরুদ্ধে খুন করে দেহ লোপাটের অভিযোগ করেন। পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। |
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার কৈথন গ্রামে জঙ্গলের ভেতর মুখ বাঁধা একটি বস্তা দেখতে পান চাষিরা। বস্তা খুলে দেখেন ভেতরে হাড়গোড় রয়েছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে যান নিমাইবাবুর পরিবারও। তাঁরা দাবি করেন, ওই দেহ নিমাইবাবুর। বস্তা থেকে মাথার খুলি-সহ ৯০টি হাড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাওয়া গিয়েছে ছাই রঙের টি শার্ট ও অর্ন্তবাসের টুকরোও।
বুধবার কাটোয়া থানায় নিমাইবাবুর ছেলে বিশ্বজিৎ সাহা হাড়গুলি তার বাবার বলে দাবি করে পুলিশকে নিমাইবাবুর ওই ছাই রঙা টি শার্ট পড়া অবস্থার একটি ছবিও দেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, দেহ লোপাটের ঘটনায় অভিযুক্তরা ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে সিপিএমের মদতে দৌরাত্ম্য শুরু করেছে। মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমাশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ, কয়েকদিন আগে ঝড়ু সর্দার নামে এক কংগ্রেস কর্মীকে খুন করার উদ্দেশ্য সিপিএমের একদল দুষ্কৃতী চড়াও হয়। থানায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সিপিএমের দুষ্কৃতীদের পেছনে পুলিশের মদতও রয়েছে বলে দাবি করেন কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তবে সিপিএম অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। কাটোয়া দক্ষিণ লোকাল কমিটির সম্পাদক সুরাৎ আলি বলেন, “এলাকা শান্ত রয়েছে। কংগ্রেস আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
কাটোয়ার এসডিপিও ধ্রুব দাস বলেন, “ওই গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। আমরাও নিয়মিত যাতায়াত করি। কংগ্রেসের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |