বর্ষা ভারী হোক বা না হোক, প্রতি বছরই বানভাসি হওয়া ছিল তাঁদের ভবিতব্য। অগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরে কাটানো যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের হাজারখানেক পরিবারের কাছে। তবে একশো দিনের কাজে তৈরি দেড় কিলোমিটারের একটি বাঁধ এ বার তাঁদের অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা থেকে খানিক রেহাই দিচ্ছে।
গঙ্গার একটি পরিত্যক্ত খাত, এলাকায় যা মরিগঙ্গা বা পলতা খাল নামে পরিচিত, তার দক্ষিণের নিচু জমি বরাবর রয়েছে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের বহু গ্রাম। বৈরাগীপাড়া, একতাপল্লি, সুকান্তপল্লি, নবপল্লি ইত্যাদি গ্রামের বসবাসকারী পরিবারগুলির বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত। সামান্য বৃষ্টি হলেই জল ঢুকতে শুরু করে এ সব গ্রামে। আর গ্রাম ছেড়ে যেতে হত তাঁদের।
শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তৃণমূলের দিলীপ মল্লিক জানান, নদীর পরিত্যক্ত খাতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল হওয়ায় এই সব এলাকা খুব নিচু। ফলে গোটা বর্ষকাল জুড়েই দোগাছিয়া, জাহান্নগর ও শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকার সমস্ত জল বেয়ে এসে এই খালে পড়ে। গঙ্গার সঙ্গে কোনও যোগ না থাকলেও মজা খালের দু’পাশ ভেসে যায়। তবে অন্য পারে রেললাইন থাকায় তা কিছুটা উঁচু। তাই খালের দক্ষিণ দিকের গ্রামেই জল ঢুকে পড়ে। দিলীপবাবু বলেন, “সামান্য বৃষ্টিতেই এমন পরিস্থিতি হওয়ায় কোনও সরকারি সহায়তা মেলে না। কারণ, প্রশাসনের চোখে তা বন্যা বলে গণ্য নয়।” |
মাস দু’য়েক আগে একশো দিনের কাজে ওই মরিগঙ্গার ওই পরিত্যক্ত খাত বরাবর প্রায় দেড় কিলোমিটার একটি বাঁধ কাম রাস্তা গড়া শুরু হয়। গঙ্গার জলতল থেকে দশ ফুট উচ্চতার মাটির ওই বাঁধের উপরে দশ ফুট চওড়া একটি রাস্তাও তৈরি হয়েছে। এর ফলে চলতি মরসুম থেকে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের ওই সব গ্রাম আর বর্ষার জলে ভাসবে না বলেই দাবি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের।
দিলীপবাবু বলেন, “মধ্য শ্রীরামপুরের লক্ষ্মী সেতু থেকে নদিয়া-বর্ধমানের সংযোগকারী রাজ্য সড়ক পর্যন্ত ১৪০০ মিটার দীর্ঘ এই বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে এর উল্টো দিকে লক্ষ্মী সেতু থেকে চৈতন্য সেতু পর্যন্ত আরও এক কিলোমিটার বাঁধ কাম রাস্তা তৈরি হবে। তবে বর্ষা নেমে যাওয়ায় এখন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।”
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, দু’মাসের মধ্যে এই বাঁধের কাজ শেষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ টাকা। বৈরাগীপাড়ার প্রায় আড়াইশো, নবপল্লি ও গোবর্ধনের বেড়-এর প্রায় দু’শো করে, সুকান্তপল্লি ও একতাপল্লির একশো করে পরিবার এর ফলে বানভাসি হওয়ার আশঙ্কামুক্ত হবে। পূর্বস্থলীর (দক্ষিণ) তৃণমূল বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “এই বাঁধ যে মরিগঙ্গার ধার বরাবর করা হয়েছে, তাকে ঘিরে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সমুদ্রগড়ের জালুইডাঙা থেকে জাহান্নগর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার নদীখাত সংস্কার করা হবে। এই বাঁধ কাম রাস্তা এলাকার মানুষের যাতায়াত সহজ করে দেবে। অনেক কম সময়ে নবদ্বীপ হাসপাতালে যাওয়া যাবে। সংস্কার করা খালে মাছচাষ করা যাবে।” বিধায়ক জানান, বাঁধের দু’পাশে আগামী ১৪ জুলাই থেকে এক সপ্তাহ ধরে চলবে বনসৃজনের বিশেষ অনুষ্ঠান।
সব মিলিয়ে এখন আশার আলো বাঁধের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে। নবপল্লির বিপিন হালদার, সুকান্তপল্লির সুমিতা দেবনাথ, বৈরাগীপাড়ার রবীন সোমেদের কথায়, “এ বার মনে হচ্ছে আর বর্ষায় ভিটে ছাড়তে হবে না।” |