স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা বেহাল খানাকুল ব্লকে
ন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে সরকারি প্রকল্প বহু ক্ষেত্রে যে শুধুই খাতায়-কলমে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন খানাকুল ২ ব্লকের মানুষ। সেখানকার ‘বিধ্বস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা’ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বিএমওএইচ অভিজিৎ কাঁড়ার। তাঁর অভিযোগ, “জোড়াতালি দিয়েও আর স্বাস্থ্য পরিষেবা টিঁকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। চিকিৎসক এবং কর্মীর অভাবে একে একে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। পরিস্থিতির উন্নতির দাবিতে জেলায় বার বার তদবির করেও সুফল মিলছে না।” হুগলির নবনিযুক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল বলেন, “আমি সবেমাত্র এসেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
খানাকুল ২ ব্লকটি গঠনগত ভাবেই বন্যাপ্রবণ। মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, দামোদর, রূপনারায়ণ এবং তাদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা বয়ে গিয়েছে এই এলাকা দিয়ে। ডিভিসি জল ছাড়লে তো কথাই নেই। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। টানা দু’দিন বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। এ দিকে, এই ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত এলাকায় জনসংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়েছে। কিন্তু এমন এলাকার জন্য আছে একটি মাত্র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ২৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সরকার ঘোষিত নীতি অনুযায়ী, ১১টি পঞ্চায়েত-পিছু ১১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। সেখানে আছেন মাত্র ৪ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জন আবার নতিবপুরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেন। সেখানেও ৩০টি শয্যার জন্য ৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আবার খাতায়-কলমে উন্নীত হয়েছে গ্রামীন হাসপাতালে। সে জন্য শয্যা-সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন তৈরি হয়েছে। কিন্তু ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ছাড়া অন্য আর চিকিৎসক আবাসনই নেই। ৬ জন নার্সের জন্য আছে ৪টি মাত্র কোয়ার্টার। বন্যা-প্লাবিত দুঃস্থ এলাকায় ঘরভাড়াও পাওয়া মুশকিল। ফলে, হাসপাতালেই রাত কাটাতে বাধ্য হন ঘর না পাওয়া চিকিৎসক, নার্সরা। বন্যার সময়ে হাসপাতাল চত্বরে জল ওঠে। নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার মধ্যেই কাজ করতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের।
ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীন হাসপাতালটিরই যখন এই হাল, তখন বাকি অংশে স্বাস্থ্য পরিষেবা কেমন হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
মাড়োখানা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দিন দ’শেক আগে তালা মেরে দিতে বাধ্য হয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক নিজেই। বীতশ্রদ্ধ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ কাঁড়ার বলেন, “এখান থেকে চিকিৎসক শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে। গত আঠারো বছর ধরে ফার্মাসিস্ট নেই। সাফাইকর্মী মারা যাওয়ার পরে দু’বছর ধরে পদটি ফাঁকা। নার্স পারিবারিক সমস্যার কারণে ছুটিতে। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করা ছাড়া উপায় ছিল না।”
একই ভাবে শাবলসিংহপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও চিকিৎসককে তুলে নিয়ে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখানে ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগটি মাসখানেক ধরে বন্ধ। রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও শুধু বহির্বিভাগটি চলছে। সেখানে আবার অন্তবির্র্ভাগের পরিকাঠামো নেই। ২৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৯টিতে দ্বিতীয় নার্স নেই। একা হাতে সব কিছু সামলাতে হয়রান হচ্ছেন একমাত্র নার্স। বারনন্দনপুরে ‘ফার্স্ট নার্স’ না থাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিষেবা বন্ধ। এ ছাড়াও, ব্লকের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্লক স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদটি দীর্ঘ দিন ধরে ফাঁকা। জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, যে কোনও মহামারী, পানীয় জলের কল-সংক্রান্ত বিষয়গুলি তাঁর দেখার কথা। যাবতীয় টিকাকরণ, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখাও ওই পদাধিকারিকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি রীতিমতো ঘোরাল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.