|
|
|
|
কালনা হাসপাতাল |
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ওটি-তে তালা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল কালনা মহকুমা হাসপাতালে। রবিবার সকালে পূর্ণিমা দাস নামে এক গৃহবধূ মৃত সন্তান প্রসব করার পরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রসূতির বাড়ির লোকজন। পরে হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল বিষয়টির তদন্তের আশ্বাস দিলে তালা খুলে দেওয়া হয়। দিন কয়েক আগেও কালনার পিয়ারিনগর গ্রামের এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তার বাড়ি ও গ্রামের লোকজন। কালনার উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের অভিযোগ, “এই হাসপাতালে যেমন চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, তেমনই অনেক চিকিৎসক আবার কাজে আন্তরিক নন। সুপারকে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” |
|
সুপারকে ঘিরে রোগীর আত্মীয়দের বিক্ষোভ। |
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রসববেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন কালনা শহরের ছোট দেউলিপাড়ার বাসিন্দা পূর্ণিমাদেবী। সাড়ে ১১টা নাগাদ মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। পূর্ণিমাদেবীর বাড়ির লোকজন জানান, গত ৬ জুলাই প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পূর্ণিমা। অনুপকুমার ভোল নামে এক স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ তাঁকে দেখেন। অনুপবাবু তাঁদের জানান, প্রসূতি ও তাঁর গর্ভস্থ শিশু সুস্থ আছে। ৭ তারিখ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পূর্ণিমাদেবীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ও ওই চিকিৎসক তাঁকে সাত দিন পরে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু বাড়ি ফিরে পূর্ণিমার অবস্থার অবনতি শুরু হলে রবিবার সকালেই তাঁকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিন তাঁকে পরীক্ষা করে সুদীপকুমার মণ্ডল নামে এক স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ জানান, মাতৃগর্ভেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। পূর্ণিমাকে বাঁচাতে হলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। পূর্ণিমার ননদ মৌসুমী মোদক অভিযোগ করেন, “আগের দিন প্রসব বেদনা থাকা সত্ত্বেও পূর্ণিমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি যাওয়ার পরে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়।” পরিবারের লোকজনের দাবি, আগের দিন হাসপাতাল থেকে প্রসূতিকে না ছেড়ে দিলে এই ঘটনা ঘটত না। গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দায়ী। |
|
ওটিতে তালা। |
পরিবারের লোকজন জানান, অস্ত্রোপচার হয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা ও এলাকাবাসীরা হাসপাতালের সুপারের খোঁজ করেন। জানা যায়, সুপার হাসপাতালে নেই। তিনি কালনা ২ ব্লকে অনুখাল এলাকায় একটি রক্তদান শিবিরে আছেন। এ কথা জানার পরে ওটি-তে তালা লাগিয়ে দেন তাঁরা। তাতে কয়েক জন কর্মী ও নার্স ভিতরে আটকে পড়েন। পরিবারের লোকজনের দাবি, অভিরূপবাবুর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাঁকে ফোনে পাননি তাঁরা। তিনি যাতে দ্রুত হাসপাতালে আসতে বাধ্য হন, সে জন্যই তাঁরা ওটি-তে তালা লাগিয়েছিলেন।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে সুপার হাসপাতালে আসেন। ছুটির দিনে তাঁর কার্যালয় বন্ধ থাকায় ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে প্রসূতির পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন সুপার। প্রসূতির পরিবারের তরফে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন দেবপ্রসাদবাবুও। প্রসূতির পরিবার দাবি করে, অনুপবাবু ও সুদীপবাবুকে বৈঠকে উপস্থিত থেকে মৃত্যুর কারণ বলতে হবে। অনুপবাবু হাসপাতালে না থাকায় দেবপ্রসাদবাবু নিজে টেলিফোন করে অনুপবাবুর কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চান। অনুপবাবু বলেন, তিনি যখন প্রসূতিকে পরীক্ষা করেছিলেন তখন প্রসূতি ও গর্ভস্থ শিশু দু’জনেই সুস্থ ছিলেন।
সুদীপবাবু অবশ্য জানান, প্রসূতিকে এ দিন পরীক্ষা করে তিনি গর্ভস্থ শিশুর হৃদ্স্পন্দন পাননি। পূর্ণিমাদেবীকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এর পরেই দেবপ্রসাদবাবু সুপারকে বিষয়টির তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি ও প্রসূতির পরিবার আরও দাবি করেন, মৃত শিশুটির ময়না-তদন্তের ব্যবস্থ করা হোক।
অভিরূপবাবু প্রসূতির পরিবারকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। তাঁরা অভিযোগ করলে তদন্তের আশ্বাস দেন সুপার। এর পর ওটি-র তালা খুলে দেওয়া হয়। |
ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |
|
|
|
|
|