|
|
|
|
|
মানসিক রোগীদের অধিকার
রক্ষায় প্রশিক্ষণ
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
মানসিক হাসপাতালে এ বার মানবাধিকার রক্ষার পাঠ।
রোগীদের মারধর, পোশাক না পরিয়ে রাখা, চিকিৎসার নামে বেঁধে রাখার অভিযোগ যে হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে বারবার ওঠে, এ বার রাজ্যের সেই মানসিক হাসপাতালগুলির নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। প্রথম দফায় কলকাতার তিনটি হাসপাতাল, পাভলভ, লুম্বিনী পার্ক এবং ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির কর্মীদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জেলাতেও।
কী থাকবে এই প্রশিক্ষণে?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী মানেই যে তিনি অন্যের উপরে নির্ভরশীল এবং তাঁর সঙ্গে যেমন খুশি আচরণ করা যায়, এমন একটা ধারণা চিকিৎসক-অচিকিৎসক সমস্ত স্তরের কর্মীদের মনেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিশেষত মানসিক হাসপাতালে এই মনোভাবটা বেশি।
আর এর বশবর্তী হয়েই মানসিক হাসপাতালের কর্মীরা এমন কিছু করছেন, যার জের পোহাতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। হাসপাতালে রোগী ‘নির্যাতন’ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। কমিশন বারবার স্বাস্থ্যকর্তাদের তলব করে এ বিষয়ে কৈফিয়তও চাইছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এই পরিপ্রেক্ষিতে এ বার স্বাস্থ্যকর্মীদের সংবেদনশীল করাটা জরুরি মনে হচ্ছে। রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ বেশি শোনা যায় নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের সম্পর্কে। তাই গোড়ায় তাঁদেরই এর আওতায় আনা হচ্ছে।”
ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির সুপার জয়ন্ত বসুর বক্তব্য, একজন মানসিক রোগী যখন হঠাৎ অশান্ত হয়ে ওঠেন, তখন কী ভাবে তাঁকে ধরতে হবে সেই পাঠটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “এক জন রোগীকে জন্তুর মতো টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। বিদেশে বহু জায়গাতেই যেমন এক জন অশান্ত রোগীকে ধরতে পাঁচ জন কর্মী লাগে। চার জন হাত-পা ধরে থাকেন। পঞ্চম জন মাথাটা সামলে রাখেন, যাতে মাথায় কোনও চোট না লাগে। প্রত্যেক মানসিক রোগীরই এই গুরুত্বটা পাওয়া উচিত। এখানে কর্মীর অভাবে সেটা হয়তো করা যাবে না। কিন্তু খানিকটা সহানুভূতিশীল তো হওয়া সম্ভব।”
প্রশিক্ষণের বিষয়টি চূড়ান্ত করার পথটা অবশ্য খুব মসৃণ ছিল না। নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা সংখ্যায় কম। তাই প্রশিক্ষণের জন্য কর্মীদের ছাড়লে পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে, বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তাদের অনড় মনোভাবে শেষ পর্যন্ত সকলেই বিষয়টি মানতে বাধ্য হন।
পাভলভ মানসিক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “মানসিক রোগীদের পরিচর্যা করার জন্য বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণের চল নেই। অথচ সেটা খুবই জরুরি। যে নার্সের বয়স ৫৮ বছর, দু’বছর পরেই অবসর নেবেন, কিংবা যাঁর বয়স ২৫, সদ্য পেশায় এসেছেন, তাঁদের সকলেরই বিষয়টা জানা উচিত। একই কথা বলা যায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ক্ষেত্রেও। এঁরা খানিকটা সংবেদনশীল হলে অন্তত লাঠি হাতে রোগীকে ভয় দেখানো বা চেঁচামেচি করার শাস্তি হিসেবে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা অশান্ত হয়ে উঠলে খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখার ঘটনা খানিকটা কমবে।” |
|
|
|
|
|