হঠাৎ দেখলেন সাইকেল এসে থামল। খাকি উর্দি পরা পুলিশকর্মীটি আপনার সঙ্গে আলাপ করলেন। এমন হতে পারে আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ চায়ের দোকানে বসে আড্ডাও দিলেন। আপনি তাঁকে চা খাওয়াতেও পারেন। আপনার এলাকার আইনশৃঙ্খলাজনিত কী সমস্যা রয়েছে, কী ধরনের সাহায্য পুলিশ করতে পারে সে সব নিয়ে মত বিনিময়ও করতে পারেন। আপনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে সে কথাও জানিয়ে দিতে পারেন পুলিশকর্মীটিকে। রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের এমন ভাবনার বাস্তবায়িত করতে আসরে নামল শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। রবিবার থেকে শিলিগুড়িতে চালু হল ‘সাইকেল পুলিশ’-এর টহলদারি। বন্দুক বা লাঠি নয়। এই পুলিশকর্মীদের হাতে থাকবে ‘নোটবুক’। সাইকেল নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবেন তাঁরা। পাড়ার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাই হবে যাদের প্রধান লক্ষ্য। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা জানান, একেক জন কনস্টেবলকে একটি সাইকেল দেওয়া হয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট এলাকায় ভাগ করে টহলদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। |
শিলিগুড়ি থানার ১২টি এলাকা এবং প্রধাননগরের ছয়টি এলাকায় আপাতত সাইকেল পুলিশ টহলদারি চালাবে। অনুষ্ঠানে ছিলেন শিলিগুড়ির ডিএসপি (টাউন) প্রদীপ পাল ও ডিএসপি (ট্রাফিক) পিনাকী মজুমদার সহ বিভিন্ন থানার অফিসাররা। অফিসাররা জানান, সাইকেলে টহলদারিতে বাড়তি অনেক সুবিধা মিলবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে টহলদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক বাসিন্দা পুলিশ দেখলে দূরে সরে যান। কোনও অপরাধের খবর থাকলেও জানাতে চান না। পুলিশ সম্পর্কে ভীতির জন্যই এটা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে বেরোতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়, সামাজিক কাজেও পুলিশকে পাওয়া যায়। মানুষের ভালমন্দ খোঁজখবর রাখেন পুলিশ কর্মীরা, সে বার্তা আমরা দিতে চাই।” পুলিশ সূত্রের খবর, কলম আর নোটবুক নিয়ে কনস্টেবল সাইকেলে চেপে বেরিয়ে যাবেন। নোটবুকে পুলিশ কর্তা, প্রশাসনিক কর্তা, থানা, দমকল, নার্সিংহোম, হাসপাতালের টেলিফোন নম্বর থাকবে। কারও কোনও টেলিফোন নম্বরের প্রয়োজন হলে সাইকেল পুলিশের কাছে পাবেন তাঁরা। পাড়ার সব থেকে বয়স্ক লোকদের খুঁজে বের করে তাঁদের খোঁজ নেওয়া। তাঁদের নাম নোটবুকে নথিভুক্ত করে সুবিধে-অসুবিধেয় বয়স্ক লোকটির পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কনস্টেবলকে। এখানেই শেষ নয়, এলাকায় জুলুমবাজি করলে হাজির হবে সাইকেল পুলিশ। প্রয়োজনে থানা থেকে পুলিশ ডেকে ব্যবস্থা নেবেন। সাইকেল পুলিশের কাছে লিখিত ডায়েরি করা যাবে। পুলিশ কর্তারা জানান, ওই কনস্টেবলের নম্বর এলাকার সবাইকে দিতে বলা হয়েছে। কোনও প্রয়োজনে সহজেই বাসিন্দারা যাতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। থানায় একজন সাব ইন্সপেক্টর সাইকেল পুলিশের মনিটরিং করবেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে দায়িত্বপ্রাপ্ত কনস্টেবলের সঙ্গে মিটিং করে তথ্য নিয়ে একটি রিপোর্ট থানার আইসির কাছে জমা দেবেন। থানা থেকে একটি রিপোর্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে জমা দিতে হবে। |