কোথাও ক্রেতারা দামে ঠকছেন। কোথাও ঠকছেন ওজনে। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকালে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন বাজারে হানা দিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হল প্রশাসনিক কর্তাদের। এদিন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তব শহরের মহাবীরস্থান, বিধান মার্কেট এবং সুভাষপল্লি বাজারে হানা দেন। হাতেনাতে ধরার পরে বেশ কয়েকজন বিক্রেতাকে বাধ্য করেন ক্রেতাদের বাড়তি দাম ফেরত দিতে। অভিযুক্তদের জরিমানাও করা হয়। বেশ কয়েকজন বিক্রেতার দাড়িপাল্লা এবং বাটখারা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ডুয়ার্সের ওদলাবাড়িতে অভিযান চালান মালবাজারের মহকুমাশাসক দেবযানী ভট্টাচার্য এবং ফালাকাটায় অভিযানে নামেন স্থানীয় বিডিও সুশান্ত মণ্ডল। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক বলেন, “বিক্রেতারা যাতে বাড়তি দাম না-নেন সেজন্য এ দিনও বোঝানো হয়েছে। কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এর পরেও ব্যবসায়ীরা সতর্ক না-হলে আইন মেনেই পদক্ষেপ করা হবে।” গত শুক্রবারই অভিযান হয় জলপাইগুড়ির দিনবাজারে। এ দিন সেখানে বাড়তি দামেই সবজি কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছে। এদিন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক মহাবীরস্থান বাজারে যান সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ। সাপ্তাহিক ছুটির বলে তখনও সেখানে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। আচমকা সদলবল মহকুমাশাসককে বাজারে দেখে বিক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। রতন পাল-সহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর বাটখারা বাজেয়াপ্ত করা হয়। বিধান মার্কেটে পান্নালাল শা নামে এক ব্যবসায়ী ৫০ টাকা দরে ফুলকপি বিক্রি করে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য হন। ৩০ টাকা কিলো বরবটি বিক্রি করতে গিয়ে ২০ টাকা জরিমানা দিতে হয় ব্যবসায়ী জগন্নাথ বিশ্বাসকে। কংগ্রেস নেতা জয়ন্ত কর বলেন, “সকালে লঙ্কা ১২০ টাকা কিলো চাইছিল। এখন মহকুমাশাসককে দেখে লঙ্কার দাম ১০০ টাকায় নেমে এসেছে। এই নজরদারি নিয়মিত হওয়া দরকার।” তবে সুভাষপল্লিতে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী সঠিক ওজনের বাটখারা ব্যবহার করছেন দেখে মহকুমাশাসক প্রশংসাও করেন। ওদলাবাড়িতেও মহকুমাশাসকের অভিযানের জেরে লঙ্কার দর ১২০ টাকা থেকে এক লাফে ৮০ টাকায় নেমে আসে। ৪০ টাকা কিলোর পটল, কাকরোল হয়ে যায় ২০ টাকা। ১৫ ব্যবসায়ীর বাটখারা আটক করা হয়। মহকুমাশাসকের নির্দেশে অভিযান হয় মেটেলি এবং মালবাজারেও। ফের বাজারে সবজির দাম বাড়ছে অভিযোগ পেয়ে ফালাকাটার বিডিও বাজারে ঢুকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেন। গত কয়েকদিনের লাগাতর বৃষ্টির জেরে সবজির দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিডিও সাফ জানিয়ে দেন, এই ধরনের অজুহাতকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। শুক্রবারের অভিযানের পরে এদিন ফের বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জলপাইগুড়ি শহরের বহু ক্রেতা। এদিন দিনবাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে কাঁচালঙ্কা কেজি প্রতি ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল ৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ২৫ টাকা ও ফুলকপি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ৮০ টাকা দরে কাঁচা লঙ্কা বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার মহকুমাশাসকের অভিযানের জেরে বাজারে আলু ১০-১৫ টাকা, পটল ২০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, গাজর ৩৫ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকায় নেমে যায়। কৃষি বিপনন দফতরের আধিকারিক সুব্রত দে বলেন, “এটা ঠিকই যে অভিযানের পরে দাম কমলেও আবার বেড়ে গিয়েছে। এর জন্য খুচরো বিক্রেতাদের কিছুটা ভুমিকা রয়েছে।” এক খুচরো ব্যবসায়ী জানান, গোড়ায় গলদ রয়েছে। পাইকারি বাজারের যে দাম প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে অনেক সময়ে তার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দিনবাজারের সব্জির পাইকারি বিক্রেতা উত্তম সাহা জানান, কাঁচা লঙ্কার দাম পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে। অন্যা সব্জির দামও কমেছে। |