মমতার চাপে অগত্যা ফেসবুক-যুদ্ধে প্রদীপও
ধুতি-পাঞ্জাবির নিপাট বাঙালি রাজনীতিকও অবশেষে ফেসবুক-যুদ্ধে!
‘বাধ্য’ই হলেন বলা যায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নিজের সচিত্র অ্যাকাউন্ট খুলতে! শরিক-নেত্রীর সঙ্গে টক্কর দিতে ফেসবুক-দেওয়ালই এখন অনিবার্য মাধ্যম যে!
শরিক নেত্রীর শাণিত আক্রমণ যে আর শুধু ‘মৌখিক’ ভাবে সামলানো সম্ভব নয়, তা বুঝেই ‘দেওয়াল-যুদ্ধে’ অবতীর্ণ বছর পঁয়ষট্টির বিরলকেশ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। আসলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ তাঁর পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক লড়াই’। মাধ্যমটা শুধু আরও ‘যুগোপযোগী’ হল!
নিজের ফেসবুক পেজে মমতা শনিবার কিছু রাজনীতিককে (কোনও দল বা রাজনীতিকের নামোল্লেখ না-করলেও রাজনৈতিক শিবিরের মতে, নিশানা কংগ্রেসই) ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে আক্রমণ করার পরে তার ‘জবাব’ দিতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এই ফেসবুকে পদার্পণ। প্রদেশ সভাপতি হিসেবে ফেসবুকেই এখন থেকে মমতার ‘জবাব’ দেওয়ার মনস্থ করেছেন বর্ষীয়ান এই রাজ্যসভার সাংসদ। বললেনও, “এখনকার প্রজন্মের কাছে ফেসবুকের যা জনপ্রিয়তা, তাতে এটি এখন একটি বিকল্প গণমাধ্যম। রাজনীতির ময়দানে আমাদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে টিভি-খবরের কাগজের পাশাপাশি এই জগতটাকেও দরকার। একে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক লড়াই সম্ভব নয়।”
বাস্তবিকই। লড়াইয়ের ময়দানে ফেসবুকের জবাবে টেলিভিশনের ‘বাইটে’ যে রাজনৈতিক ‘কামড়’টা ম্লান লাগে! তৃণমূলের একাধিক নেতাই প্রযুক্তি-বান্ধব। আই-ফোন, ব্ল্যাকবেরি, আইপ্যাডে স্বচ্ছন্দ অনেক তৃণমূল নেতাই ফেসবুক-ট্যুইটারে দিব্যি চৌখশ। সেখানে সওয়া শতাব্দী পেরনো কংগ্রেসের প্রদেশ স্তরের বিশেষ কোনও পরিচিত মুখেরই ব্যক্তিগত ফেসবুক-উপস্থিতি নেই! চূড়ান্ত নেট ও প্রযুক্তি-বান্ধব অমিতাভ চক্রবর্তী সেই অর্থে ‘ব্যতিক্রম’ই। নিমেষে যে কোনও প্রয়োজনীয় তথ্য নিজের ব্ল্যাকবেরি ঘেঁটে বার করতে তিনি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু ফেসবুক-দুনিয়ায় ‘ব্যক্তিগত আপত্তি’ থাকায় তাঁরও নিজস্ব অ্যাকাউন্ট নেই সেখানে। তাঁর হাতেই কিন্তু ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ট্যুইটারে প্রদীপবাবুর বা দলের মত জানানোর হাতেখড়ি হয়েছিল। এখনও নিয়মিত ট্যুইটারে দলের মতপ্রকাশ করেন প্রদেশ কংগ্রেসের এই সাধারণ সম্পাদক।
তবে ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনৈতিক বৃত্তে বড় হওয়া বাংলার প্রাক্তন অধ্যাপক প্রদীপবাবু কখনও ভাবেননি, রাজনীতির ময়দানে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, তথ্য-পরিসংখ্যান, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার বাইরে ‘নেট-দুনিয়া’য় তাঁকে সামিল হতে হবে! বাড়িতে একমাত্র কন্যা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। স্ত্রীও কম্পিউটারে সড়গড়। কিন্তু বই, লেখালেখিতে বুঁদ ধুতি-পাঞ্জাবির (কলেজ পেরোনোর পর থেকে এটাই তাঁর একমাত্র পোশাক) সাবেক বাঙালি সংস্কৃতিমনস্ক এই রাজনীতিক কম্পিউটার-প্রযুক্তির কারিকুরিতে একেবারেই দড় নন। কিন্তু অভ্যাস ‘পরিবর্তনে’ বাধ্য করলেন মমতাই! প্রদীপবাবুর কথায়, “এ বার থেকে মমতার মন্তব্যের পাল্টা বক্তব্য ফেসবুকেই জানাব!”
মমতা বনাম কংগ্রেসের এই দ্বৈরথে প্রদীপবাবুর ভরসা জয়প্রকাশ মজুমদার। কংগ্রেসের সাইবার সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়প্রকাশবাবুই অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন। শনিবার মমতার মন্তব্যের পাল্টা জবাবে দলের ফেসবুক পেজে (তখনও প্রদীপবাবুর অ্যাকাউন্ট সচল হয়নি) লেখা হয়েছিল, ‘সাবধান। তৃণমূলের নেতারা পালিয়ে বেড়ান। ওটা আপনাদের নেই, তা সবাই জানে! ল্যাম্পপোস্টদের মেরুদণ্ড থাকে না, বুদ্ধি থাকে না, কথা বলার অধিকার থাকে না’! রবিবার সকাল থেকে নিজের দেওয়ালে ‘পোস্ট’ করা শুরুও করেছেন প্রদীপবাবু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের যে তথ্য নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘বাগ্যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে, তার জবাবে ফেসবুকে প্রদীপবাবু লিখেছেন, ‘রাজ্যে সন্ত্রাসে মৃত্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে রাজ্যের ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’। তৃণমূলের নাম না-করেও তাঁর কটাক্ষ, ‘১২৬ বছরের প্রাচীন জাতীয় দল কংগ্রেস নীতি ও মূল্যবোধের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। মূল্যবোধ-নিষ্ঠ রাজনীতির প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক দলের সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হলে বরং ভাল’!
নিজের তিনটে মোবাইলে ফোনে অজস্র ফোন সামলানোই ফি দিন প্রদীপবাবুর একমাত্র প্রযুক্তি-সখ্য। এর বেশি দরকার হলেই ডাক পড়ে অমিতাভ-জয়প্রকাশের! এই ঢাল-তলোয়ার নিয়েই প্রদীপবাবু ফেসবুক-যুদ্ধে নামলেন!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.