তৃণমূল তাঁকে সমর্থনের কথা বললে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন বলে ফের ইঙ্গিত দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রবিবার বিকালেই কলকাতায় এসেছেন রাষ্ট্রপতি-পদে ইউপিএ মনোনীত প্রার্থী। আজ, সোমবার তিনি রাজ্য বিধানসভায় প্রথমে সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তার পরে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে তাঁর বসার কথা।
প্রচার কর্মসূচিতে শহরে এসে প্রণববাবু এ দিন বলেছেন, “যাঁরা আমাকে সমর্থন করছেন, তাঁদের সঙ্গেই বৈঠক করছি।” এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তৃণমূল সমর্থনের কথা জানালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার দরজাও যে খোলা আছে, ফের সেই বার্তাই প্রণববাবু দিলেন বলে কংগ্রেসের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা।
কিন্তু প্রণববাবু সম্পর্কে তৃণমূলের মনোভাব কী, সেই ইঙ্গিত এ দিন মিলেছে রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথা থেকে। সিপিএমের সঙ্গে প্রণববাবুর ‘ঘনিষ্ঠতার’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি পদে আমরা কাকে সমর্থন করব, তা দল এখনও ঘোষণা করেনি। তবে প্রণববাবু রাজনীতির পাদপ্রদীপের সামনে এসেছিলেন সিপিএমের হাত ধরে। তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটেছিল বাংলা কংগ্রেসের (যুক্তফ্রন্ট সরকারের শরিক) মাধ্যমে। মাঝখানের অধ্যায়েও তাঁর সঙ্গে সিপিএমের ঘনিষ্ঠতার কথা আমরা জানি। |
আর প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে যখন সরে যাচ্ছেন, তখনও সিপিএমের হাত ধরে। এটা আমার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ!”
আর এই মন্তব্যের পরে প্রণব-মমতা বৈঠকের সম্ভাবনা আরও সুদূর পরাহত হয়ে পড়ল বলে রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের ধারণা। তৃণমূলের একাংশের মতে, প্রণববাবু নিজে উদ্যোগী হয়ে মমতাকে ফোন করলে দু’জনের মধ্যে বরফ গলার এবং বৈঠক হওয়ার একটা সম্ভাবনা
রয়েছে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, “মমতার সঙ্গে প্রণবদার কথা হওয়ার একটা সূক্ষ্ম সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু প্রণবদা সম্পর্কে সুব্রতবাবু যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।”
দিল্লি থেকে এ দিন প্রণববাবুর সঙ্গে কলকাতায় এসেছেন এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদও। বিমানবন্দরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া-সহ কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। ঢাকুরিয়ায় তাঁর বাড়ির সামনে প্রশ্নের জবাবে
প্রণববাবু বলেন, “আমি ইউপিএ প্রার্থী হিসেবে প্রচারে এসেছি। বিভিন্ন রাজ্যেই ঘুরছি।” বিধানসভায় আজ তাঁর প্রস্তাবিত বৈঠক নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, “সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করব। যাঁরা আমাকে সমর্থন করছেন, তাঁদের সঙ্গেই বৈঠক করছি।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক বা কথা হবে কি না, সরাসরি জানতে চাওয়া হলে প্রণববাবু অবশ্য জবাব দেননি।
রাষ্ট্রপতি ভোটে কাকে সমর্থন করা হবে বা শেষ পর্যন্ত ভোটদানে বিরত থাকা হবে কি না, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও জল্পনা চলছে। ইতিমধ্যেই মমতা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি ভোটে তাঁদের অবস্থান ঘোষণা করবেন ভোটদানের দু-তিন দিন আগে। আগামী ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। মমতা ১৭ জুলাইয়ের মধ্যেই দলীয় স্তরে বৈঠক করে তাঁদের অবস্থান ঘোষণা করতে পারেন।
বিধানসভার নৌশর আলি কক্ষে আজ সকালে বামফ্রন্টের শরিক সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, সমাজবাদী পার্টি এবং ডিএসপি-র (মোট ৫২ জন) বিধায়কদের সঙ্গে প্রথমে বৈঠক করার কথা প্রণববাবুর। তার পরের বৈঠক কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানিয়েছেন, কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রণববাবুর আজ সাংবাদিক বৈঠক করার কর্মসূচিও আছে।
|