নিজস্ব সংবাদদাতা • কান্দি |
ফের একটি বিগ্রহের সন্ধান মিলল খড়গ্রামে। এই এলাকারই পারুলিয়ার পুরান দিঘি থেকে কয়েক দিন আগেই পাওয়া গিয়েছিল একটি সূর্য মূর্তি। এ বার মিলল সাড়ে তিন ফুট লম্বা দেড় ফুটের বেশি চওড়া একটি মূর্তি। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “আয়ুধ দেখে মনে হচ্ছে মূর্তিটি সম্ভবত একাদশ-দ্বাদশ শতকে নির্মিত ‘স্থানক-বিষ্ণু’ মূর্তি। এই মূর্তি আগে দক্ষিণবঙ্গে কমই পাওয়া যেত। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই মূর্তি আমরা পাচ্ছি।” তাঁর কথায়, “এখান থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, ওই সময়ে ব্রাহ্মণ্য-বৈষ্ণব ধর্মের বিপুল প্রভাব তৈরি হয়েছিল।” খড়গ্রামের ঝিল্লি অঞ্চলে নামুপাড়া তালোয়া নামে একটি জলাশয় থেকে মূর্তিটি পাওয়া গিয়েছে এ দিন সকালে। ফুজাম্মেল শেখ নামে এক ব্যক্তি ওই জলাশয় খোঁড়াচ্ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সম্প্রতি নামুপাড়া মন্দির থেকে একটি মূর্তিটি চুরি হয়েছিল, তবে তা এত লম্বা নয়।” এই দিন খড়গ্রাম থানার ওসি বাবিন মুখোপাধ্যায় মূর্তিটি থানায় নিয়ে গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় মূর্তিটি উদ্ধার হয়। আমরা পুরাতাত্ত্বিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।” এলাকার বাসিন্দা পার্থ পাল বলেন, “এই এলাকার বাসিন্দারা প্রাচীন মূর্তি ও পুরাবস্তু সম্পকে ওয়াকিবহাল হয়ে উঠেছেন। জলাশয় খুঁড়তে মূর্তিটি পেয়ে তাঁরা যত্ন নিয়ে তা উদ্ধার করেন। পুরাতত্ত্ব দফতরের উচিত, এই এলাকায় ভাল করে খননকার্য করা। পরপর যখন এত মূর্তি পাওয়া গেল, তখন, এই এলাকায়, আরও এমন বিগ্রহ থাকতে পারে।” ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, গোটা এলাকা জুড়েই একই সঙ্গে ছড়িয়ে রয়েছে মধ্যযুগের বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাব। রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার, কর্ণসুবর্ণ এবং সাগরদিঘিতে বৌদ্ধ উপাসনাস্থল ও শাসনকেন্দ্রের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অনুমান করা হয়, এই এলাকা ছিল বিক্রমশীলা মহাবিহার থেকে বর্তমান উত্তর-পূর্ব বিহারের সে যুগের একাধিক প্রধান নগরীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফা হিয়েন, হিউয়েন সাংয়ের মতো চিনা পরিব্রাজকেরা আদি মধ্য যুগে ওই পথ দিয়েই এদিকে এসেছিলেন। ওই একই পথ দিয়ে বণিকেরাও রাঢ় এলাকার বসতিগুলির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন বলে অনুমান করা হয়। সেই রাস্তারই আশপাশের খড়গ্রাম, পারুলিয়া সুদূর অতীত থেকেই অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিল বলেও অনুমান করে নেওয়া হয়। পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ। সেন আমলে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাব বাড়তে থাকে। সেখানেও সেই সমৃদ্ধির ছাপ পড়েছে। |