ঢাক পিটিয়ে সরকারি প্রকল্পের প্রচার হাটে
‘শোনো..শোনো...সবাই শোনো’। ভিড়ে ঠাসা হাটে আচমকা ঢাকের আওয়াজ আর ঘোষণা শুনে অনেকেই প্রথমটায় অবাক হয়েছিলেন। পরে যখন ঢাকি বললেন, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে জানাতেই তাঁর হাটে আসাতখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভিড়টা বেশ উৎসাহী হয়েই জড়ো হল তাঁর চার পাশে। শনিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলার মেদিনীপুর (সদর) ব্লকের পাঁচখুরি হাটে শুরু হল ঢাক পিটিয়ে সরকারি প্রকল্প-প্রচারের কার্যক্রম। রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকেই অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর এ ভাবে প্রচার-পরিকল্পনা করেছে। সে জন্য রীতিমতো ইন্টারভিউ নিয়ে তিন মাসের চুক্তিতে ঢাকি নিয়োগও হয়েছে।
একটা সময় ছিল, যখন এ ভাবেই গ্রামে-গ্রামে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে প্রচার চলত। ঢ্যাঁড়া পেটানো শুনে জড়ো হতেন সাধারণ মানুষ। রাজ্যের নতুন সরকারের উদ্যোগে যেন ফেলে আসা সে-সব দিনই ফিরে এল। মেদিনীপুরের সবথেকে বড় হাট বসে পাঁচখুরিতে। প্রতি শনিবার। হাজার চল্লিশ লোকের ভিড় জমে। প্রচার শুরুর জন্য তাই পাঁচখুরি হাটকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা ছাড়াও আদিবাসীদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতেও প্রচার চালানো হল। ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত ‘ঢাকি’ অনিল কালিন্দি ছাপানো সরকারি বিজ্ঞপ্তি থেকে পড়ে শোনালেন আদিবাসীদের অধিকারের কথা। হাটে জড়ো হওয়া লোকজন জানলেন, কোনও প্রকাশ্যস্থানে বিশেষ কোনও গোষ্ঠীর মানুষজনকে যেতে না দেওয়া অন্যায়। অত্যাচারিত-নির্যাতিত ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা ও অনান্য সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। এ ব্যাপারে যদি কোনও সরকারি কর্মচারী ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন, তবে তাঁরও এক বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। ‘সরকারি ঢাকি’ এ-ও জানালেন, ‘আপনি যদি বিপিএল তালিকাভুক্ত হন, বয়স যদি ৬০ বছর বা তার বেশি হয়, তা হলে বার্ধক্য ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন’।
ঢাক পিটিয়ে প্রচার। মেদিনীপুরের পাঁচখুরি হাটে। ছবি: কিংশুক আইচ।
এমনিতে সরকারের এ রকম নানা প্রকল্পের কথা কানাঘুঁষো শুনলেও অনেকেরই এ-সব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই অনিলবাবু যখন ঢাক পেটাতে পেটাতে সরকারি বিজ্ঞপ্তি পড়ছেন, প্রতিটি কথাই অনেকে উৎকর্ণ হয়ে শুনলেন। সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শালবনির কলসীভাঙার দুলাল পাতর বললেন, “ঝুড়ি বেচতে হাটে এসেছিলাম। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারলে তো ভালই হয়।” কেশপুরের বিশ্বনাথপুরের মুকুন্দ সিংহ বলেন, “জিনিসপত্র কিনতে এসেছিলাম। ঢাকের আওয়াজে দাঁড়িয়ে পড়ি। এমন প্রচার গ্রামে-গ্রামে হলে অনেকেরই উপকার হবে।” সরকারি প্রচারের জন্য ঢাকি হিসাবে নির্বাচিত সদর ব্লকেরই কেরানিচটির বাসিন্দা অনিল কালিন্দি নিজেও আদিবাসী গোষ্ঠীভুক্ত। চাষের জমি-জমা নেই। পুজোর সময়ে মাসখানেক ঢাক বাজানো ছাড়া কুলো-ঝুড়ি তৈরি করেই সংসার চলে। মাস তিনেকের জন্যে হলেও সরকারের ঢাক বাজানোর বরাত পেয়ে খুশি অনিলও। তাঁরও আশা, “সরকারের এই উদ্যোগ গ্রামেগঞ্জে সাড়া ফেলবেই।”
পাশাপাশি, পাঁচখুরির বাসিন্দা নয়ন ফৌজদারের অনুযোগ, “ঢাক-প্রচারের সঙ্গেই ছাপানো বিজ্ঞপ্তি বিলি হলে আরও ভাল হত। নানা সুযোগ-সুবিধার কথা আর একটু বিশদে জানা যেত।” বিষয়টি শুনে মেদিনীপুর সদরের বিডিও অয়ন নাথের আশ্বাস, “প্রচারের সময়ে এ বার থেকে লিফলেট বিলিরও বন্দোবস্ত করা হবে।” অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক শান্তনু দাস বলেন, “প্রতিটি ব্লকেই জোর কদমে প্রচার শুরু হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.