ইতিহাস গড়েও অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রতিপক্ষের জন্য তাঁর মুখে উঠে এল সান্ত্বনাবাক্য। “আমি প্রার্থনা করছি, একটা গ্র্যান্ড স্লাম যেন ওর কেরিয়ারে অ্যান্ডি মারে পায়। এই টুর্নামেন্টে খুব ভাল টেনিস খেলেছে ও। টেনিস নিবেদিত প্রাণ। আমি আবার বলছি ভবিষ্যতে একটা গ্র্যান্ড স্লাম অন্তত ওর প্রাপ্য।” তাঁর প্রতিপক্ষের জন্য যে সেন্টার কোর্ট কাঁদছে, ম্যাচ শেষে অল ইংল্যান্ড ক্লাবে যে ভাবে সবার চোখে জল, সেই প্রশ্ন স্বভাবতই করা হল সাত বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন ফেডেরারকে। জানতেন, মারের উপর কতটা চাপ আছে? গোটা ব্রিটেন ওর জয় চেয়েছিল? “সত্যি কথা বলতে গেলে আমি কাগজ পড়ি না। কাজেই বলতে পারব না,” উদাসীন উত্তর সুইস-মেশিনের। |
তার আগে সেন্টার কোর্ট দেখেছে সেই আবেগঘন করুণ দৃশ্য। যখন মাইক হাতে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ মারে। কী বলবেন, কী বলা উচিত, কী বললে সবাই সান্ত্বনা পাবে বুঝে উঠতে পারছেন না। কথা হারিয়ে গিয়েছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। ভিআইপি গ্যালারিতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বান্ধবী। কোনও রকমে চোখ মুছে মারে যখন বললেন, “আমি আবার চেষ্টা করব। খুব কাছে এসেছিলাম,” হাততালির বন্যায় ভেসে গেল সেন্টার কোর্ট। তার পর চ্যাম্পিয়নকে কুর্নিশ। মারে বললেন, “আমি জানতাম এটাই আমার সেরা সুযোগ। কিন্তু রজার বড্ড ভাল। একজন তিরিশ বছরের লোক যে এই টেনিস খেলতে পারে, ভাবাই যায় না। না রজার, তোমার বয়সটা মোটেই তিরিশ না।” তার পরই মাথা নত করে, “অভিনন্দন। রজার, তুমি যোগ্য হিসেবেই জিতেছ।”
রবিবারের ফাইনালে আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছে তো ফেডেরারকেও। জিতে ওঠার মুহূর্তে তাঁর চোখেও তো চিকচিক করেছে জল। আনন্দাশ্রু। না হলে কেন বলবেন, “আমার জীবনের সেরা কয়েকটা ম্যাচ এই টুর্নামেন্টে খেললাম। বরাবর উইম্বলডনে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে আমার খেলা খোলে। এখানে সব কিছু আমার এত পরিচিত। তিন বছর পর ট্রফি হাতে কোর্ট ছাড়তে ভাল লাগছে।” |
সাম্প্রাসকে ছুঁয়ে কেমন লাগছে? এ বার প্রথম হাসলেন ফেডেরার, “কী ভাবে ব্যাখ্যা করি বলুন তো? পিট সাম্প্রাস ছিল আমার হিরো। তাঁকে ছুঁতে পেরে কথা বলার ভাষাই নেই। আমি গর্বিত।” আর র্যাঙ্কিংয়ে এই বয়সে ফের এক নম্বরে উঠে আসা? ফেডেরারের উত্তর, “হ্যাঁ, ব্যাপারটা অনেকটা উপহার পাওয়ার মতো। খুব দামি একটা উপহার। একটা গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে। দু’সপ্তাহ ধরে আপনার মানসিকতা, শারীরিক সক্ষমতা, স্কিল, স্ট্যামিনা, সাপোর্ট স্টাফ, পরিবার এবং সবচেয়ে বেশি করে হয়তো ভাগ্য। সব কিছুই এ বার আমার সঙ্গে ছিল। আমি গর্বিত।” গ্যালারিতে তখন তাঁর দুই যমজকন্যাকে নিয়ে হাততালিতে ফেটে পড়ছেন স্ত্রী মির্থা।
|