চাষিদের ‘বিভ্রান্তি’ রুখতেই সিঙ্গুরে আন্দোলন, দাবি
মানুষ যাতে ‘বিভ্রান্ত’ না হন, সে জন্যই মিছিল। রবিবার সিঙ্গুরে ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র মিছিলের উদ্দেশ্য এ ভাবেই ব্যাখ্যা করলেন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু এ দিন বলেন, “নানা রাজনৈতিক দল এখানে এসে মিটিং-মিছিল করছে। চাষিদের তারা ভুল বোঝাচ্ছে। বিভ্রান্ত করছে। আমাদেরও তো সংহতি বজায় রাখতে হবে!” সেই ‘সংহতি’ বজায় রাখতেই তৃণমূল আগামী দিনে সিঙ্গুরে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। তবে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর টিপ্পনী, “ওঁরা (তৃণমূল) আসলে ভয় পেয়েছেন।”
বাম-জমানা থেকে সিঙ্গুরে আন্দোলন-নির্ভর ‘জনভিত্তি’ গড়ে তুলেছে তৃণমূল। তারা এখন রাজ্যে ক্ষমতাসীন। ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতাদের জন্য মাসিক ভাতা এবং চালের ব্যবস্থাও করেছে বর্তমান সরকার। তা হলে সিঙ্গুর আন্দোলনের সূচনা-পর্ব থেকে যে ‘অনিচ্ছুকেরা’ তৃণমূলের সঙ্গী তাঁরা ‘বিভ্রান্ত’ হবেন কেন? রবীন্দ্রনাথবাবুর জবাব, “চাষিরা আমাদের পক্ষে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। কিন্তু ঝুঁকি নেওয়ার জায়গা নেই। তা ছাড়া, ওদের এ ধরনের চেষ্টাকে উপেক্ষা করা যায় না।”
কৃষিজমি রক্ষা কমিটির মিছিল। সিঙ্গুরে। ছবি: প্রকাশ পাল।
যাঁদের চেষ্টাকে তিনি উপেক্ষা করছেন না তাঁরা কারা? ভাঙেননি কৃষিমন্ত্রী। তবে শুক্রবারই সিঙ্গুর দেখেছে বহু দিন বাদে সেখানে হাজার দশেক মানুষের মিছিল করেছে বামফ্রন্ট। সেই মিছিলে ‘বহিরাগত’ই ছিল বেশি। পুলিশের হিসেবে এ দিন কমিটির মিছিলে ভিড় হয়েছে শুক্রবারের থেকে বেশি। সেখানে উত্তরপাড়া, নালিকুল, হরিপাল, ভদ্রেশ্বর, সাঁতরাগাছি থেকে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বামেরা ‘বাইরের লোক এনে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন’ বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছিলেন হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক তথা ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র নেতা বেচারাম মান্না। এ দিন কমিটি কী করল? বেচারামবাবুর জবাব, “আমাদের আন্দোলন সংগঠিত করতে হয় না। সিঙ্গুরের মানুষের সমর্থন আমাদের সঙ্গেই আছে।”
তবে তৃণমূলের একাধিক স্থানীয় নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, ২০০৬ থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসা ‘অনিচ্ছুক’দের অনেকেই এখন ভবিষ্যৎ-ভাবনায় ‘বিচলিত’। অনেকেই ইদানীং বলছেন, ‘ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নিলেই ভাল হত’। সিঙ্গুর নিয়ে তৃণমূলের তরফে ‘যথাযথ’ আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি বলেও তাঁদের একটা বড় অংশের ধারণা রয়েছে। সরকারি সাহায্য ‘অপ্রতুল’ বলেও অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্ট তো বটেই, এসইউসি, নকশাল, কংগ্রেসও সিঙ্গুরে গিয়ে আন্দোলনে নামায় তৃণমূলের উপরে ‘চাপ’ বাড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকের মন্তব্য, “জমি ফেরত পাওয়ার দাবিতে যাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সেই চাষিরা এখন সরকারি সাহায্য নির্ভর হয়ে পড়েছেন। তাঁদের অনেকে জমির দাম নিতে চাইছেন। কিন্তু নানা কারণে পারছেন না। আর ওঁরা (তৃণমূল) ধারাবাহিক ভাবে শক্তি প্রদর্শনে বিশ্বাসী। এখনও তা-ই করছেন।”
বেচারামবাবুও মানছেন, “অনিচ্ছুক চাষিরা কষ্টে আছেন।” তবে তাঁর সংযোজন, “আমরা তাঁদের স্বার্থেই দ্রুত প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা ও আইনি জটিলতা কাটিয়ে জমি ফেরতের দাবি জানাচ্ছি। সেই দাবিই এ দিন মিছিল থেকে তোলা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.