দিল্লি, মহারাষ্ট্রের পরে এ বারে উত্তরপ্রদেশ। কংগ্রেসকে সাফ করে উত্তরপ্রদেশের পুর-নির্বাচনে বারোটির মধ্যে দশটি শহরের মেয়র পদ দখল করল বিজেপি। আগরা, লখনউ, বারাণসী, কানপুর, মেরঠ, গাজিয়াবাদ, মোরাদাবাদ, গোরখপুর,আলিগড় ও ঝাঁসি পুরসভা বিজেপির দখলে এসেছে। এ ছাড়া ইলাহাবাদে মায়াবতীর বসপা ও বরেলিতে সপা-র প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
দু’বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ভালো সাড়া পেয়ে উজ্জীবিত বিজেপি শিবির। দলের দাবি, কংগ্রেস জমানায় দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার সাধারণ মানুষ বিজেপিকেই বিকল্প হিসাবে বাছছে। অদূর ভবিষ্যতে দিল্লির তখ্ত দখলের স্বপ্নপূরণের ইঙ্গিত এই ফলাফল। বিজেপি নেতা মুক্তার আব্বাস নাকভির কথায়, “কংগ্রেসের নীতি ও দুর্নীতির জন্য মানুষ বিরক্ত। একের পর এক নির্বাচনে মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করে তাই বিজেপিকেই পছন্দ করছেন।”
কিন্তু মুখে এই দাবি করলেও বিজেপি নেতৃত্বের উদ্বেগ কাটছে না। কারণ, সদ্য উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেই দলের ভরাডুবি হয়েছে। অথচ পুরসভাগুলিতে ভাল ফল করছে দল। এর কারণ বিশ্লেষণ করে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, শহর এলাকায় বরাবরই দাপট রয়েছে বিজেপির। নিচু তলায় দলের সংগঠনও রয়েছে। আরএসএস-ও সেখানে যথেষ্ট সক্রিয়। তাই পুরসভায় ফল ভালো হচ্ছে। যেমন বিধানসভা নির্বাচনে বাজপেয়ীর গড় লখনউয়ে বিজেপি ভালো ফল করতে না পারলেও লখনউ পুরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় দলের সংগঠন জোরদার নয়। তা ছাড়া বিধানসভা বা লোকসভার ভোটে মানুষের রায় বদলে যায়। তখন বিকল্প হিসাবে তাঁরা সমাজবাদী পার্টি বা বহুজন সমাজ পার্টিকে বেছে নেন। সদ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলেও তা স্পষ্ট। সামনের লোকসভা ভোটেও এই ধারা অব্যাহত থাকলে কংগ্রেসই আবার কেন্দ্রে ক্ষমতয় যাবে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, কেন্দ্রীয় স্তরে দলের কাছে সব থেকে বড় সঙ্কট নেতৃত্বের। অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো সর্বজনগ্রাহ্য কোনও নেতা এখন বিজেপিতে নেই। বিজেপিতে এমন এক মুখ দরকার, যিনি গোটা দলকে উজ্জীবিত করতে পারবেন।
দলের নিচু তলার কর্মীরা নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এ বছরের শেষে গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের পর মোদীকে কেন্দ্রীয় স্তরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াও দলের মধ্যে শুরু হয়েছে। সঙ্ঘ নেতৃত্বও সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। এমনকী সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত এখন নিতিন গডকড়ীকে পরামর্শ দিয়েছেন, বিজেপি নেতাদের সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক মসৃণ করার দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। সঞ্জয় জোশীকে কেন্দ্র করে গডকড়ী-মোদী বিবাদ চরম আকার ধারণ করেছিল। তার পর আরএসএসের হস্তক্ষেপে মোদীর দাবি মেনেই গডকড়ী সঞ্জয় জোশীর ইস্তফা আদায় করে নেন। এই সূত্র ধরে গডকড়ী যেমন মোদীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার চেষ্টা করছেন, তেমনই দলের অন্য নেতাদের সঙ্গেও সম্পর্ক ফেরানোর চেষ্টা করছেন। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে মোদীর সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকলেও এখন তাঁরা নিয়মিত কথাবার্তা বলেন। আজ লালকৃষ্ণ আডবাণীও ব্লগে মোদীর প্রশংসা করে বলেছেন, “ভারতের রাজনীতিতে মোদী ছাড়া আর কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি এ ধরনের আক্রমণ হয়নি। তার পরেও তাঁর জনপ্রিয়তা বিপুল।” সঙ্ঘ নেতৃত্ব চাইছেন, আসন্ন নির্বাচনে মোদীই বাজপেয়ীর ভূমিকা নিন। |