দণ্ডভোগেই শেষ নয়। কারাগারে হাতের কাজ করে কিংবা ঘাম ঝরিয়ে বন্দিরা যে-আয় করে, তা থেকে কিছু টাকা কেটে অর্থসাহায্য করতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে। এর জন্য তৈরি করতে হবে ক্ষতিপূরণ তহবিল। ২০০৮ সালে ‘কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ সংশোধন করে সব রাজ্যকে এই প্রকল্প রূপায়ণের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। এত দিন পরে সেই তহবিল তৈরির পথে হাঁটছে পশ্চিমবঙ্গ।
কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে কারা দফতর। কারাকর্তারা দেখেছেন, পারিশ্রমিক হিসেবে দণ্ডিত বন্দিদের যে-টাকা দেওয়া হয়, তা নিতান্তই কম। তার থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা কেটে নিলে বন্দির হাতে কার্যত কিছুই থাকবে না। তাই ওই প্রকল্প চালু করার আগে জেলে দিনমজুরি বৃদ্ধির উপরে জোর দিয়েছে কারা দফতর। এক কারাকর্তা বলেন, “বন্দিদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কারাসচিব তথা স্বরাষ্ট্রসচিবকে মাথায় রেখে অর্থ, শ্রম ও বিচার দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ‘ওয়েজ কমিটি’ আছে। জেলে শেষ পারিশ্রমিক বেড়েছিল ২০০৭-এর ১৭ মে। সম্প্রতি ‘ওয়েজ কমিটি’র বৈঠকে সকলে অপরাধীদের ‘রোজ’ (দৈনিক মজুরি) বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
|
বন্দিদের দিনমজুরি
কোথায় কত |
|
পশ্চিমবঙ্গ |
দিল্লি |
কর্নাটক |
দক্ষ |
২৫ |
৫২ |
৯০ |
মাঝারি দক্ষ |
২৩ |
৪৪ |
৮০ |
অদক্ষ |
১৮ |
৪০ |
৭০ |
সব অঙ্ক টাকায় |
|
|
কারা দফতর সূত্রের খবর, জেলে এক জন ‘দক্ষ’ বন্দি-শ্রমিক এখন ২৫ টাকা করে ‘রোজ’ পায়। মাঝারি দক্ষতার বন্দি শ্রমিকের দিনমজুরি ২৩ টাকা। আর ‘অদক্ষ’ বন্দি-শ্রমিক পায় ১৮ টাকা। অর্থাৎ মাসে ৩০ দিন কাজ পেলে এক জন দক্ষ শ্রমিক আয় করে ৭৫০ টাকা। অথচ কর্নাটক ও দিল্লিতে এই পারিশ্রমিক পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেকটাই বেশি। এক কারাকর্তা জানান, কর্নাটকে দক্ষ বন্দি-শ্রমিক ৯০ টাকা করে ‘রোজ’ পায়। মাঝারি মানের দক্ষ শ্রমিকের মজুরি ৮০ টাকা। আর অদক্ষ বন্দি-শ্রমিক দৈনিক ৭০ টাকা পারিশ্রমিক পায়। দিল্লিতে ওই পারিশ্রমিক যথাক্রমে ৫২, ৪৪ এবং ৪০ টাকা।
বন্দিদের ‘রোজ’ থেকে ক্ষতিপূরণ তহবিল গড়ার
উদ্দেশ্য কী?
এক কারাকর্তা বলেন, “জেল এখন সংশোধনাগার। নানা ভাবে চারিত্রিক গুণ ফুটিয়ে তুলে অপরাধীদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের উদ্দেশ্য। নতুন আইন সেই ভাবনার রূপায়ণকেই ত্বরান্বিত করবে।” একাধিক কারাকর্তা মনে করছেন, এই প্রকল্প চালু হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি ‘সামাজিক দায়িত্ব’ পালনে বাধ্য হবে বন্দিরা। রাগের বশে কিংবা প্রতিহিংসার কারণে প্রাণহানি হলে কেবল শাস্তি ভোগ করলেই যে সেই পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা শেষ হয়ে যায় না, আয়ের টাকা কাটার মধ্য দিয়ে তা প্রতিনিয়ত অনুভব করবে বন্দিরা। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনে যোগ দিলে অপরাধীর হীনম্মন্যতা অনেকটাই কমবে বলে কারাকর্তাদের
একাংশের অভিমত।
কারা দফতরের নিয়ম অনুযায়ী শুধু সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের দিয়েই জেলে কাজ করানো যায়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলে যত বন্দি আছে, তার মাত্র ৩০ শতাংশ দণ্ডিত। বর্তমান মজুরিতে ওই সংখ্যক সাজাপ্রাপ্ত বন্দির পারিশ্রমিক কেটে ক্ষতিপূরণ তহবিলে কত টাকা জমানো যাবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কারাকর্তাদের একাংশ। এক কারাকর্তা বলেন, “সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা তাদের আয়ের অর্ধেক নিজের জন্য খরচ করতে পারে। কিন্তু কোনও বন্দি যদি পরিবারের কোনও কাজে তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে চায়, তা হলে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়।” ক্ষতিপূরণ তহবিল তৈরি হলে বন্দির সঞ্চিত অর্থ থেকেই টাকা কেটে নেওয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন কারাকর্তাদের একাংশ।
কিন্তু কত টাকা কাটা হবে?
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, জেলা বা রাজ্য স্তরে ‘লিগাল সার্ভিস অথরিটি’ এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। |