ইয়েদুরাপ্পার চাপের কাছে নতিস্বীকার করে কর্নাটকে সদানন্দ গৌড়াকে সরিয়ে দিয়েও স্বস্তিতে নেই বিজেপি নেতৃত্ব।
গত কাল বিজেপির কোর গ্রুপের বৈঠকের পর আজ নিতিন গডকড়ীর বাসভবনে গৌড়াকে ডেকে পাঠানো হয়। বৈঠকের পরেই গডকড়ী ঘোষণা করেন, সদানন্দ গৌড়া ইস্তফা দিয়েছেন। সেটি স্বীকারও হয়েছে। আগামি কাল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা দেওয়ার পর নতুন নেতা জগদীশ সেত্তার রাজ্যের দায়িত্ব সামলাবেন। বিধায়ক দলের বৈঠকের আগেই দলের সভাপতি বেনজির ভাবে এই ঘোষণা করে দেন। আগামিকাল বিধায়ক দলের বৈঠকে নজরদারি করতে অরুণ জেটলি ও রাজনাথ সিংহ বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন।
কর্নাটকে গত চার বছরে তিন বার মুখ্যমন্ত্রী বদল করল বিজেপি। তাতেও কিন্তু উদ্বেগ কাটছে না দলের। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে এই পরিবর্তনের ফলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। গৌড়া দলীয় নেতৃত্বের কথায় ইস্তফা দিলেন বটে, কিন্তু তিনি এখন রাজ্যে দলের সভাপতি পদ পাওয়ার গোঁ ধরে আছেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা জানেন, এখন গৌড়াকে রাজ্য সভাপতি করলে নতুন করে সঙ্কট তৈরি হবে। |
জগদীশ সেত্তারকে (বাঁদিকে) অভ্যর্থনা সদানন্দ গৌড়ার। ছবি: পি টি আই |
গডকড়ীরা তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও গৌড়া সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। গৌড়া এক সময় ইয়েদুরাপ্পারই পছন্দ ছিলেন। কিন্তু উভয়ের মধ্যে তিক্ততা বাড়ায় এখন সেত্তারের মতো এক জন লিঙ্গায়েত নেতাকে বসাতে বাধ্য হল দল।
সঙ্কটের এখানেই শেষ নয়। বিজেপি নেতৃত্ব কবুল করছেন, কর্নাটকে লিঙ্গায়েত ভোটের আধিপত্য থাকলেও ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ও ছোট নয়। গৌড়া সেই সম্প্রদায়েরই নেতা। এত দিন ইয়েদুরাপ্পা বিদ্রোহ করলেও গৌড়া-অনুগামীরা অবাধ্য হননি। এ বারে গৌড়ার সমর্থকরা যদি বিদ্রোহ শুরু করেন, তা হলে পরিস্থিতি ফের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাঁরা দাবি তুলছেন, গৌড়াকে রাজ্যের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু সেই পদ থেকে ঈশ্বরাপ্পা সরতে রাজি নন। আগামিকাল জেটলিরা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দলে সম্প্রদায়গত ভারসাম্য রক্ষার দিকে আলাদা করে নজর দেবেন। সেই লক্ষ্যে লিঙ্গায়েত সেত্তারের সঙ্গে অন্য দুই সম্প্রদায়ের দু’জনকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা যায় কি না, সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ক্ষেত্রে দল ঈশ্বরাপ্পা আর অশোকের নাম বিবেচনা করছে। এরই মধ্যে রাজ্যে পালাবদল নিয়ে বিরোধী দলগুলি বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করেছে। কংগ্রেস নেতা বি কে হরিপ্রসাদ বলেন, “যে ভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত ইয়েদুরাপ্পার চাপের কাছে নতিস্বীকার করল বিজেপি, তাতে স্পষ্ট, কর্নাটকে দুর্নীতির সরকারই বহাল থাকবে। বিজেপির উচিত অবিলম্বে বিধানসভা ভঙ্গ করে নির্বাচনে চলে যাওয়া।” শুধু বিরোধীরা নয়, এনডিএ-র শরিক দল জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদবও বিজেপিকে একহাত নিয়ে বলেছেন, “সদানন্দ গৌড়াকে বলির পাঁঠা করল বিজেপি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্যই তাঁকে এই খেসারত দিতে হল।” বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইয়েদুরাপ্পা ও সেত্তারকে জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মত ছাড়া রাজ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ইয়েদুরাপ্পারা সেই শর্তে রাজি হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর সেই আশ্বাস তাঁরা রক্ষা করবেন কি না, সেই আশঙ্কাই কুরে খাচ্ছে নেতৃত্বকে।
|