কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে ধর্মশালা। এখন সেখানে রমরমিয়ে চলছে কাপড়ের ব্যবসা। শুধু তা-ই নয়, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগও উঠেছে বড়বাজারের ৬বি মল্লিক স্ট্রিটের সেই বাড়িতে। এই বাড়িটিতেই শনিবার রাতে আগুন লেগে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য রবিবার জানিয়েছেন, কাগজপত্র খতিয়ে না-দেখে এই সব অভিযোগের জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সাধারণ ভাবে অগ্নিবিধি না-মেনেই যে ওই বাড়িতে ব্যবসা চলছিল, তা জানান দমকল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রায় শ’খানেক বছরের পুরনো বাড়িটিতে আগে ধর্মশালা ছিল। সাতের দশকের মাঝামাঝি থেকে ধর্মশালার ঘরগুলি অন্য ব্যবসায় ভাড়া দেওয়া শুরু হয়। বাড়ির ভিতরে দেওয়াল কেটে তৈরি হয় দোকান, গুদাম। দোতলার ছাদের উপর বেআইনি ভাবে তৈরি হয় আরও দু’টি তল। চারতলার ‘ছাদ’ ঢাকা হয় অ্যাসবেস্টস, পিচ-চট দিয়ে। এ নিয়ে পুরসভায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় বলেও এলাকাবাসীর দাবি।
ওই বাড়িতে নির্মাণকাজ পুর-বিধি মেনে হয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। এ বিষয়ে এ দিন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “গতকাল রাতে আগুন লেগেছে। আজ রবিবার, পুরসভা বন্ধ। সোমবার ওই বাড়ির সমস্ত নথি দেখা হবে।” দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “ওই বাড়িটিতে কোনও রকম অগ্নিবিধি মানা হয়নি।” |
ভস্মীভূত সেই বাড়ি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র |
নন্দরাম মার্কেট, স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের পরেও একই ভাবে ওই সব বাড়িতে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছিল। তার পরেই বিভিন্ন বহুতলে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা দেখতে তৈরি হয় পুলিশ-পুরসভার যৌথ পরিদর্শন কমিটি। শহরের বিভিন্ন বহুতলে সেই সময়ে পরিদর্শন হলেও পরবর্তীকালে যে হয়নি, তারই নজির শনিবার রাতের অগ্নিকাণ্ড। এর জন্য প্রশাসনিক নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন এলাকার বাসিন্দারা। তা পুরোপুরি অস্বীকার করেননি স্থানীয় ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি সুনীতা ঝাওয়ার। তিনি জানান, তাঁর এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত বহু বাড়িই বিপজ্জনক। বেশির ভাগ বাড়িই ভাড়া দিয়ে মালিক অন্যত্র থাকেন। ফলে মেরামতির দায় চাপছে ভাড়াটেদের উপরে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই মেরামতি হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই বাড়িটি আগে দোতলা ছিল। ধর্মশালা থাকায় ছাদে ছিল সার-সার রান্নাঘর। তাঁদের কাছে থাকা বাড়িটির পুরনো ‘ব্লু-প্রিন্টে’ও তা স্পষ্ট। মল্লিক স্ট্রিটের ওই বাড়িটি একটি ট্রাস্টের মালিকানাধীন। বর্তমানে ওই বাড়ির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন আদালত নিযুক্ত ‘রিসিভার’। যদিও স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ওই বাড়িতে ধর্মশালা ছিল কি না, তা তাঁর জানা নেই। ট্রাস্টের মালিকানার বিষয়টিও তাঁর অজানা। সুনীতাদেবীর বক্তব্য, “আমি ১৭ বছর ধরে এই এলাকার পুর-প্রতিনিধি। ওই সময় থেকেই বাড়িটি এ ভাবেই রয়েছে। এর আগে কী হয়েছে, জানি না। পুরসভার নথিতেও কী রয়েছে, আমার জানা নেই।” তিনি আরও জানিয়েছেন, বাড়িটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। মালিকপক্ষের কেউ সেখানে থাকেন না। বহুদিন ধরে সেটি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুর-কর মিলছে সে ভাবেই।
প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, ওই বাড়ির চারতলার দোকান, গুদামে সিন্থেটিক শাড়ি মজুত ছিল। আগুন লেগেছিল সেখানেই। দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। অ্যাসবেস্টস-এর উপরে থাকা পিচ-চটের সংস্পর্শে পৌঁছে তা ‘ভয়াল’ চেহারা নেয়। চারতলা থেকে আগুন ছড়ায় তিনতলায় তাঁতের শাড়ির দোকানে। কাপড়ের স্তূপের কোনও অংশে ‘লুকোনো’ আগুন রয়ে গিয়েছে কি না, রবিবার দুপুর পর্যন্ত তা খুঁজে দেখে দমকল।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িটির দু’টি দোকানের মালিকপক্ষের নামে অগ্নিনির্বাপক বিধি না-মানার অভিযোগ দায়ের করেছে দমকল। |