জ্যোতি বসুর জন্মদিন
বচসা মার্শালের সঙ্গে, ছবি রেখে গেটে বেঞ্চ-বক্তৃতা
লিমুদ্দিনের দোতলার বারান্দায় টাঙানো তাঁর হাসিমুখের ছবিটাই অসময়ে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হয়ে উঠল!
মাথার উপরে ঘন কালো মেঘ। ইতস্তত কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি গাছের ছাতা গলে গায়েও পড়ছে। কলকাতা হাইকোর্ট আর বিধানসভা ভবনের মাঝে রবিবারের ফাঁকা রাস্তায় টানটান দাঁড়িয়ে ওয়াকিটকি-হাতে পুলিশ। হাইকোর্টের ঠিক উল্টো দিকে বিধানসভার ১ নম্বর গেট ঘিরে তখন প্রবল উত্তেজনা। রাজ্যের বেশ কিছু প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদ এবং বিধায়ক একটা ছবি খুঁজছেন। যে ছবি হবে ‘প্রতিবাদের হাতিয়ার’। যে ছবিকে সামনে রেখে বামমনস্ক জনতার ‘আবেগ’ স্পর্শ করতে সুবিধা হবে।
সেই সময়েই কাজে লাগল আলিমুদ্দিনে থাকা জ্যোতি বসুর ছবিটা।
একগোছা তার আর দড়ি দিয়ে বিধানসভার দরজায় প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ওই ছবি বেঁধে ফেললেন প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় এবং বামফ্রন্টের প্রাক্তন মুখ্য সচেতক রবীন দেব। বিধানসভার নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকেদু’টি বেঞ্চ এবং কাঠের চেয়ার চেয়ে নেওয়া হল। বিধানসভার ভিতরে লবিতে বসুর প্রতিকৃতিতে দ্রুত শ্রদ্ধা জানিয়ে বেরিয়ে এসে ওই ছবিতেই মালা দিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম এবং অন্য বাম নেতারা।
ইন্দিরা ভবনের সামনের ফুটপাথে বসু-স্মরণে জ্যোতির্ময়ী সিকদার।
মুজফ্ফর আহমেদ ছাড়া আর কারও জন্মদিন পালনের রেওয়াজ যে দলে নেই, সেই সিপিএমের হাতে বসুর ওই ছবিই তুলে দিল সরকার-বিরোধী আক্রমণ শানানোর অস্ত্র। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, পরিষদীয় স্তরে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে কোনও ‘বাধা’ নেই। কিন্তু বিধানসভার ভিতরে প্রাক্তন বিধায়কদের প্রবেশাধিকার স্পিকার না-দেওয়ায় সিপিএম তথা বাম নেতৃত্ব একেবারে রাস্তায় নেমে ‘বসু-আবেগ’ কাজে লাগিয়ে পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তোলার সুযোগ পেয়ে গেলেন! যাকে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যুগপৎ বলছেন ‘নাটক’!
বিধানসভা চত্বরে এ দিন ছিল টানটান উত্তেজনা এবং নাটকীয়তা! সকাল সাড়ে ১১টার কিছু আগেই ১ নম্বর গেটে (ওখানেই কর্মী এবং মার্শাল মোতায়েন ছিলেন) একে একে জড়ো হন বামফ্রন্টের প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়ক, সাংসদেরা। তাঁদের মধ্যে প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশ দাস, সৌমেন্দ্রনাথ (অঞ্জন) বেরার পাশাপাশি প্রাক্তন সাংসদ সুধাংশু শীলও ছিলেন। কলকাতা জেলা সিপিএমের প্রবীণ নেতা মহম্মদ নিজামুদ্দিন তাঁর পরিচিতিপত্র দেখিয়ে মার্শালকে বলেন, তিনি ১৯৭১ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন। জ্যোতিবাবু বিরোধী শিবিরে থাকাকালীন বিধানসভায় তাঁর সহকর্মী তিনি। অথচ সেই নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে বিধানসভায় ঢুকতে পারবেন না? মার্শাল রাজি হননি। স্পিকারের নির্দেশের কোনও লিখিত প্রতিলিপি দেখাতে না-পারায় মার্শালের সঙ্গে বচসা বাধে প্রাক্তন বিধায়কদের। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু তখন ঘটনাস্থল থেকেই স্পিকারকে ফোন করে জানতে চান, এত বয়স্ক এবং মহিলা প্রাক্তন বিধায়কেরা দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা কি সব ‘দুষ্কৃতী’? ভিতরে ঢুকতে দিতে স্পিকারের কাছে আর্জি জানান তিনি। স্পিকার অবশ্য জানান, তিনি অপারগ।
বিধানসভার গেটের সামনে ক্ষুব্ধ সিপিএম নেতারা। রয়েছেন মহম্মদ
নিজামুদ্দিন, আনিসুর রহমান ও সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার।
এর পরেই অল্প সময়ের জন্য সূর্যবাবুর নেতৃত্বে বর্তমান বিধায়কেরা (সঙ্গে সাংসদ প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়) বিধানসভার ভিতরে ঢোকেন বসুর প্রতিকৃতিতে মালা দেওয়ার জন্য। বেরিয়ে এসে বাইরে বেঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে (যেমন জ্যোতিবাবুর রাজনৈতিক জীবনের গোড়ার দিকে হত) বিরোধী দলনেতা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সুবিধা-অসুবিধা দেখে মনীষীদের জন্মগ্রহণ করতে হবে এখন! মহাকরণ থেকে এই সংস্কৃতি বিধানসভায় সংক্রামিত হয়েছে। আজকের ঘটনা থেকে এটাই বলতে চাই, সরকার ভয় পেয়েছে! যদি অনুমতি দেওয়া হত, তা হলে এই অনুষ্ঠানটা ৬ তারিখের চেয়ে বড় হয়ে যেত!”
বামফ্রন্টের সহকারী দলনেতা, অসুস্থ সুভাষ নস্কর হাসপাতাল থেকেই অল্প সময়ের জন্য চলে এসেছিলেন বিধানসভায়। তাঁর মন্তব্য, “জন্মদিন-মৃত্যুদিন এর পর থেকে সরকারই ঠিক করে দেবে! সর্বতো ভাবে আমাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে এখন।” বক্তা ছিলেন আর এক প্রবীণ বিধায়ক প্রবোধ সিংহও।
এ সবের পরেই সরকারের তরফে আসরে নামানো হয় মন্ত্রী সুব্রতবাবুকে। বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, “একটা গান মনে পড়ছে ‘স্ত্রী’ (আসলে ‘সন্ন্যাসী রাজা’) ছবির। কাহারবা নয় দাদরা বাজাও, উল্টোপাল্টা মারছো চাঁটি / সূর্যকান্ত তুমিই দেখছি, বিধানসভা করলে মাটি!” তবে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন দু’দিন আগে পালন করলেও গত রবিবার নির্দিষ্ট দিনটিতে মহাকরণে তাঁর প্রতিকৃতিতে মালা দিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। তেমন কিছু এ দিন ঘটেনি। সুব্রতবাবুর ব্যাখ্যা, “বিধান রায়, রবীন্দ্রনাথ, এঁদের ব্যাপারটাই আলাদা। কারও সঙ্গে তুলনা করে এঁদের ছোট করা উচিত নয়। বিধানসভায় জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালনের সময় মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার, সবাই ছিলেন। এর থেকে বড় আর কী হতে পারে?”

—নিজস্ব চিত্র
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.