রাস্তায় বসু-স্মরণ বামফ্রন্টের
বিধানসভায় ‘ব্রাত্য’ প্রাক্তন বিধায়কেরা
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন পালনকে ঘিরে শাসক-বিরোধী সংঘাত আরও তীব্র হল। প্রাক্তন বিধায়ক ও সাংসদদের ভিতরে ঢুকতে না-দেওয়ার প্রতিবাদে বিধানসভার দরজায় বসুর ছবি বেঁধে রাস্তায় তাঁকে স্মরণ করল বিরোধী বামফ্রন্ট! প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়ক, সাংসদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে যা কার্যত পরিণত হল সরকার-বিরোধী জনসভায়! দেশের ইতিহাসে দীর্ঘকালীন মুখ্যমন্ত্রিত্বের রেকর্ডধারীর জন্মদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে পালনে সামিল হলেন বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমও।
বস্তুত, বসুর ৯৯তম জন্মদিনকে ঘিরে শাসক-বিরোধী তরজা তুঙ্গে পৌঁছল রবিবার। বিধানসভার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করলেন, সরকার ‘ভয়’ পেয়েছে। বিধানসভায় প্রাক্তন বিধায়কদের ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনাকে ‘অসংসদীয়’ আখ্যা দিয়ে প্রাক্তন স্পিকার হালিম জানান, তিনি ‘গভীর আঘাত’ পেয়েছেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বললেন, “যারা বলেছিল বিধানসভায় বিরোধীদের ‘মর্যাদা’ দেওয়া হবে, তাদের জমানায় কী ঘটছে দেখাই যাচ্ছে!”
বিধানসভার গেটে বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সূর্যকান্ত মিশ্র, হাসিম আব্দুল হালিম। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র
এ সবের পাল্টা জবাব দিতে আসরে নেমে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, সংবাদমাধ্যমে ছবি তোলার জন্য বিরোধীরা যে ‘নাটক’ করলেন, তাকে তাঁরা ‘তীব্র ধিক্কার’ জানাচ্ছেন। বিরোধী দলনেতাকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করে সুব্রতবাবুর দাবি, বসুর জীবদ্দশায় যাঁরা তাঁর কাছে যেতেন না, তাঁরাই এ দিন ‘নাটকে’ অংশ নিলেন! আর যিনি অনুমতি না-দেওয়ায় এত কিছু, সেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “ওঁরা জ্যোতি বসুকে কতটুকু শ্রদ্ধা জানালেন, জানি না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিয়ে নাটক করলেন!”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বসু-স্মরণকে ঘিরে তরজায় সরকারের মনোভাবের বিরোধিতাই করেছে জোট শরিক কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “জ্যোতিবাবু যাঁদের নেতা ছিলেন, সেই বামফ্রন্টেরই প্রাক্তন বিধায়কদের বিধানসভায় ঢুকতে না-দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই।” আর সরকারের প্রতি কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, “তা হলে তো জ্যোতিবাবু জীবিত থাকলে ‘প্রাক্তন’ বলে তাঁর বিধানসভায় ঢোকা হত না!”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জন্মদিনের দু’দিন আগেই সরকারি ভাবে বসু-স্মরণের পরেই স্পিকার জানিয়েছিলেন, ৮ জুলাই প্রাক্তন বিধায়ক এবং সংবাদমাধ্যমের বিধানসভায় প্রবেশাধিকার থাকবে না। সেই দিন থেকেই জল্পনা ছিল, বসুর জন্মদিন ঘিরে সংঘাত বাধবে। বাস্তব ঘটনা অবশ্য জল্পনাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
স্পিকার বলছেন, বসু-স্মরণে কোন কোন প্রাক্তন বিধায়ক আসতে পারেন, সেই তালিকা বিরোধীদের কাছে তিনি চেয়েছিলেন বিধানসভার সচিব মারফত। অন্য দিকে বিরোধী দলনেতার দাবি, তাঁর সঙ্গে আলোচনায় এমন কোনও তালিকার কথা শুক্রবার পর্যন্ত বলা হয়নি। প্রাক্তন স্পিকার হালিম প্রশ্ন তুলেছেন, “প্রাক্তন বিধায়কদের বিধানসভার পরিচয়পত্র আছে। তাঁরা পেনশন এবং আরও কিছু সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। তাঁদের জন্য আবার তালিকা বা চিঠি দিতে হবে কেন? পার্থ (আগের জমানায় বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়) কি সব ব্যাপারে আমাকে চিঠি দিত?”
বর্তমান স্পিকার বিমানবাবুর ব্যাখ্যা, “ছুটির দিন নিরাপত্তা কর্মী পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকেন না। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেলে বিধানসভার অভিভাবক হিসেবে আমার উপরে দায় চাপত। সেই জন্যই প্রাক্তন বিধায়ক কারা আসতে পারেন, তাঁদের তালিকা চেয়েছিলাম। রবীন দেব যখন এ দিন আমায় ফোন করেছিলেন, তখনও বলেছিলাম, বিধানসভার সামনে মার্শালের হাতে তালিকা দিলেও আমি অনুমতির ব্যবস্থা করব। কিন্তু ওঁরা সেটা করলেন না!” তাঁর আরও মন্তব্য, “বিধানসভার নিয়ম-নীতি-সৌজন্য কিছু মানবেন না, জবরদস্তি নিজেদের মতো চলবেন! এটা হতে পারে না!”
গোটা ঘটনাপ্রবাহে এক বাম বিধায়কের মন্তব্য, “ভাগ্যিস এ-রকম সরকার ছিল! বিধানসভায় ঢুকতে দিলে কি প্রতিবাদের এত বড় হাতিয়ার আমরা পেতাম?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.