বৃহস্পতিবার সকাল। নন্দকুমারের টেংরাখালি থেকে স্ত্রী সোমাকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন উত্তম মান্না। চিকিৎসকের সুপারিশ অনুযায়ী আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হল তাঁকে। হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানালেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই চিকিৎসক ছুটিতে রয়েছেন। তাই তিন দিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে হাসপাতালের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বিভাগ। এই ছবি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে এক্স-রে ও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার দায়িত্বে রয়েছেন চিকিৎসক পি কে ভুঁইয়া ও কে ডি সাহা। কিন্তু ওই দু’জনেই ছুটি নেওয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ওই বিভাগের কাজ। জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীর পাশাপাশি অন্তর্বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ও এক্স-রে করার জন্য চিকিৎসকরা সুপারিশ করলেও হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে তা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা হাসপাতলে দুই বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন রোগীর এক্স-রে ও ১০-৩০ জন রোগীর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার সুপারিশ করেন চিকিৎসকরা। তাঁরা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে সরকার নির্ধারিত ৩০ টাকা দিয়ে এক্স-রে করাতে পারেন। হাসপাতালের বাইরে কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেই খরচ প্রায় ১৫০ টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে অচলাবস্থার কারণে বাধ্য হয়েই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে অনেক রোগীর পরিবার। ফলে বাড়ছে খরচের ধাক্কাও।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দোতলায় রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায় আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বিভাগের দরজা বন্ধ। দফতরের কর্মীরা রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কবে থেকে আবার কাজ শুরু হবে তারও নির্দিষ্ট দিন জানাতে পারছেন না তাঁরা।
এ দিন ১৫ বছরের নাতনিকে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে এনেছিলেন কাঁকটিয়ার যশোমন্তপুর গ্রামের বৃদ্ধা সুমিলা নায়েক। ফল একই। ফেরার পথে হতাশ সুমিলাদেবী বলেন, “অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় বিভাগ বন্ধ। কবে পরীক্ষা করা যাবে তা জানানো হয়নি। এখন ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।” রোগীদের অভিযোগ, খোদ জেলা হাসপাতালে এই ঘটনার পরেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। জেলা হাসপাতাল সুপার প্রকাশকুমার বাড়ুই বলেন, “ওই বিভাগের এক জন চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে ছুটিতে রয়েছেন। অন্য আর এক চিকিৎসক স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ায় ছুটি নিয়েছেন। বিকল্প চিকিৎসকের জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছে।” |