আদালত ‘দুর্গম ও উপদ্রুত’ এলাকার মানে জানতে চেয়েছিল। কোন হাসপাতাল দুর্গম এলাকায় আর কোনটি নয়, তার ফয়সালা হয়নি। এই অবস্থায় উচ্চতর পাঠ্যক্রমে ভর্তির পরীক্ষায় দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকার হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা বাড়তি ৩০ নম্বর পাবেন কি না, তা নিয়ে আইনি যুদ্ধ জটিল হচ্ছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে বৃহস্পতিবার এই ব্যাপারে ২০০ পাতার একটি রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিচারপতি সুবল বৈদ্যের ডিভিশন বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়। আজ, শুক্রবারেও এই মামলার শুনানি চলবে। সোমবারেই ডিভিশন বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় দিতে পারে।
বিচারপতি প্রতাপ রায় এ দিন কিছু প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, তিন বছর দুর্গম এলাকার হাসপাতালে কাজ করলে যদি বাড়তি ৩০ নম্বর দেওয়া হয়, তা হলে ওই এলাকায় এক বছর কাজ করলে বাড়তি ১০ নম্বর মিলবে না কেন? তাঁর আরও প্রশ্ন, দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকার হাসপাতাল বাছাইয়ের ভিত্তি কী? চিকিৎসার মতো বিষয়ের ক্ষেত্রে মেধা ছাড়া অন্য কোনও নিরিখে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা ঠিক কি না, তা নিয়েও দ্বিধা আছে বিচারপতির। ‘দুর্গম ও উপদ্রুত’ এলাকা নিয়ে প্রশ্নের মীমাংসা না-হওয়ায় হাইকোর্ট চলতি শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমে (এমডি, এমএস) সরকারি চিকিৎসকদের জন্য নির্দিষ্ট ২৭০টি আসনে কাউন্সেলিং স্থগিত করে দিয়েছিল। এই মামলায় এক দিকে রয়েছে রাজ্য সরকার এবং অন্য দিকে আছে সরকারি চিকিৎসকদের দু’টি পক্ষ। এক পক্ষের ডাক্তারেরা এ ভাবে দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকা বলে চিহ্নিত করে কিছু চিকিৎসককে উচ্চতর পাঠ্যক্রমে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার বিরোধী। অন্য পক্ষের বক্তব্য, ওই চিকিৎসকেরা দুর্গম এলাকায় কাজ করছেন বলেই ৩০ নম্বর বেশি পাচ্ছেন।
আবেদনকারীদের একাংশের আইনজীবী রাজর্ষি হালদার এ দিন বলেন, মেডিক্যাল কাউন্সিল একমাত্র ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমে এই নিয়ম প্রবর্তনের কথা বলেছে। অথচ রাজ্য সরকার এই নিয়ম এমডি, এমএস পাঠ্যক্রমেও প্রয়োগ করছে। আবেদনকারীদের অন্য অংশের আইনজীবী লক্ষ্মীকুমার গুপ্ত বলেন, সরকারি চিকিৎসকদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন নির্ধারিত আছে। সেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যে-সব চিকিৎসক দুর্গম ও উপদ্রুত এলাকায় কাজ করেন, শুধু তাঁরাই ৩০ শতাংশ বেশি নম্বর পাবেন। গত ২ মে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল, এই মামলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত স্নাতকোত্তরে সরকারি চিকিৎসকদের ভর্তির কাউন্সেলিং স্থগিত থাকবে।
সরকার প্রয়োজনীয় তথ্য জমা না-দিলে আদালত বাড়তি নম্বর সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে দেওয়ার কথাও ভাবতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। এই অবস্থায় সোমবারের সম্ভাব্য রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে সব পক্ষই। |