বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জল বন্ধ শহরে, দুর্ভোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ঝড়ে সাব স্টেশনে যান্ত্রিক গোলযোগে মাত্র ২ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। অথচ তারই জেরে শিলিগুড়ি শহরে ফের পানীয় জল পরিষেবা বন্ধ রইল। বৃহস্পতিবার সকালে পুরসভার ৪৭ টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পানীয় জল না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন। এই ঘটনায় পুর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী ঠিক কী কারণে পানীয় জলের পরিষেবা বন্ধ রয়েছে দুপুর পর্যন্ত তা নিয়ে পুরসভার কর্মী, আধিকারিক, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সঠিক তথ্যও ছিল না। কেউ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে। কেউ বলছিলেন গত ৩ মে রাতে ঝড়ে হাইটেনশনের পোল উল্টে গিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা যে ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল সে সব লাইন মেরামতির কাজ স্থায়ীভাবে হয়নি। তা করতেই বিদ্যুৎ পরিষেবা মাঝে মধ্যেই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অথচ এ দিন দুপুরে সমস্যা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি ডিভিশনের আধিকারিক, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের বৈঠক হয়। সেখানেই জানা যায় ডাবগ্রাম সাব স্টেশনে যান্ত্রিক গোলযোগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা ২০ মিনিট থেকে ৮ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত জল সরবরাহ ব্যবস্থার বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ ছিল। মাত্র দু’ ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ না থাকায় জল পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ার কথা নয় বলেই বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ মনে করেন। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত কলকাতায় পুরসভার কাজে রয়েছেন। এ দিনের বৈঠকে ছিলেন জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ অরিন্দম মিত্র, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মারা। রঞ্জনবাবু বলেন, “ঝড়ে সাব স্টেশনে যান্ত্রিক গোলযোগে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছিল। তার জেরে সকালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠিক মতো জল সরবরাহ করা যায়নি। রাতে ফুলবাড়ি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে সকালে সরবরাহের জন্য অনেকটা জল তুলে রাখা হয়েছিল। সেটা কিছু ওয়ার্ডে অল্প সময়ের জন্য সরবরাহ হয়েছে। তবে বিকেলে জল সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। আর কোনও সমস্যা হবে না বলেই বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে।” বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির জলপাইগুড়ি ডিভিশনের বাস্তুকার তাপস হালদার জানিয়েছেন, ডাবগ্রামে অবস্থিত সাব-স্টেশন থেকে শিলিগুড়ি শহরে জল সরবরাহ ব্যবস্থার ফুলবাড়ি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট-সহ অন্যান্য পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। তিনি বলেন, “এ দিন ঝড়বৃষ্টিতে সাব স্টেশনে গোলযোগের জন্য সকালে প্রায় ২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়নি।” পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে প্রথমে ঝঙ্কারমোড়ে ভুগর্ভস্থ জলাধারে এবং সেখান থেকে শক্তিগড়, পরেশনগরের জলাধারে জল পাঠানো হয়। তার পরে বিভিন্ন ওভারহেড জলাধারের মাধ্যমে বা পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। সকালে ৩৬-৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল ৬টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত এবং বাকি ওয়ার্ডগুলিতে ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত জল সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ঝড়ে হাইটেশনের পোল উল্টে যাওয়ায় গত শুক্রবার এবং শনিবার শহরে জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ দিন ফের এক বেলা জল সরবরাহ হয়নি। বিকেলেও কিছু ওয়ার্ডে জল সরবরাহের সমস্যা ছিল বলে অভিযোগ। জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ অরিন্দম মিত্রের ইস্তফা দেওয়া আবেদন ঘিরে যে ডামাডোল চলছে তাতে ওই দফতরের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ। দলের নির্দেশ মতো এ দিন অবশ্য তিনি ইস্তফার আবেদন প্রত্যাহার করতে মেয়রের দফতরে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর ইস্তফার আবেদনও গ্রহণ হয়নি। সে কারণে তিনিই জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। যদিও শীঘ্রই জল সরবরাহ-সহ আরও ২ টি বিভাগ অরিন্দমবাবুর বদলে তৃণমূলের অন্য মেয়র পারিষদকে দায়িত্ব দিতে দলের সিদ্ধান্তে আবেদন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “জল সরবরাহ ব্যবস্থার মতো জরুরি পরিষেবা সুষ্ঠু ভাবে দিতে পুর কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তা না হলে ২ ঘন্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে গোটা শহরেই জল সরবরাহ করা গেল না কেন? জল সরবরাহ বিভাগ তৎপর হলে সকালে নির্ধারিত সময়ের পরও কিছু সময়ের জন্য জল দিতে পারতেন। তা ছাড়া বৃহস্পতিবারও সকালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল ঠিক মতো সরবরাহ হয়নি। কখন, কোথায় কী গোলমাল হচ্ছে তা সঙ্গে সঙ্গে জেনে সমস্যা মেটাতে তৎপর হওয়া দরকার।” |