দীর্ঘ রোগভোগে মারা গিয়েছে গ্রামের এক কিশোর। তার জেরে গ্রামেরই এক বৃদ্ধাকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে সামাজিক ভাবে ‘বয়কট’ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুরের বিডিও-র কাছে এসে মড়ার অঞ্চলের খুলিয়ামুড়ি গ্রামের এক বৃদ্ধা অভিযোগ করলেন।
বড়ছেলে শিবশঙ্কর মাণ্ডিকে সঙ্গে নিয়ে ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধা বাসন্তি মাণ্ডি বিষ্ণুপুরের বিডিও সুদীপ্ত সাঁতরা-র কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, ‘বয়কট’ করা ছাড়াও তাঁদের মারধর করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে তিনি নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জি জানান।
বৃদ্ধার অভিযোগ, “আড়াই মাস রোগ ভোগের পরে পড়শি এক কিশোর কিছু দিন আগে মারা যায়। এর পরেই পড়শিরা সিমলাপালের ভূতশহর থেকে এক জানগুরুকে এনে আমাকে ডাইনি বলে অপবাদ দেয়। বাড়ির সামনে থাকা জলের টিউবওয়েলটিও ওরা ভেঙে দেয়। রাস্তায় আমাকে এক পেয়ে তাড়াও করে। পালিয়ে পাশের হারাবতি গ্রামে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই। পরে ছেলেরা বাড়ি ফিরিয়ে আমার পরে।” |
বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন বাসন্তি মান্ডি। নিজস্ব চিত্র। |
বড়ছেলে শিবশঙ্কর বলেন, “মা-কে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পরেই পড়শিরা আমাদের সামাজিক ভাবে ‘বয়কট’ করেন। কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। গ্রামের একটি কুয়ো থেকে খাবার জল আনতে হচ্ছে। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে এই কাণ্ড চলছে।” বৃদ্ধার পরিবারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বিডিও-র কাছে তাঁরা স্বাভাবিক জীবন যাত্রার ব্যবস্থা করার আর্জি জানান। বিডিও সুদীপ্ত সাঁতরা মীমাংসা করার জন্য ওই গ্রামে যুগ্ম বিডিও বৈদ্যনাথ হেমব্রমকে পাঠান। গ্রামে গিয়ে মৃত কিশোরের পরিবারের লোকেদের পাওয়া যায়নি। অনেকেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাননি। অল্প কয়েকজনকে নিয়ে তিনি গ্রামের গাঠতলায় আলোচনা করেন। তাঁর কাছে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ওই বৃদ্ধার পরিবার গ্রামের কারোর সঙ্গে বিশেষ মেলামেশা করে না। তাই অনেকের সঙ্গে তাঁদের বনিবনা নেই।
ওই গ্রামে ১৬টি পরিবারের বাস। এক কিলোমিটার দূরে প্রাথমিক স্কুল। বিডিও বলেন, “গ্রামে নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল থাকলেও কারওকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া অন্যায়। মড়ার পঞ্চায়েতের প্রধানকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। বয়কট না তোলা হলে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মড়ার পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মান্নান খাঁ বলেন, “বাসিন্দাদের বুঝিয়ে সমস্যা মেটাবার চেষ্টা করব।” |