অবশেষে হালতুর সুপ্রিয়া হালদারের পথেই হাঁটল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের হামিদা খাতুন। বাপের বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ি-- কোথাও ফিরতে চায় না এই নাবালিকা। হোমে থেকেই সে ফের পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হতে চায়। বুধবার পরিবারের লোকেদের হামিদা এ কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে।
শ্বশুরবাড়ির ‘নির্যাতন’ ও বাপের বাড়ির ‘গঞ্জনা’ সহ্য করতে না-পেরে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ৩ মে
|
ফাইল চিত্র |
রঘুনাথপুরের কাদামাদরা গ্রামের বাপের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ছিল ১৪ বছরের হামিদা। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে ছাতনার একটি বেসরকারি হোমে পাঠায়। বুধবার সেখানে তার বাবা হারুন আনসারি, মা জুবেদা বিবি ও জামাইবাবু সামসের আনসারি তাকে ফিরিয়ে নিতে আসেন। কিন্তু হামিদা তাঁদের জানিয়ে দেয়, এখন সে ফিরবে না। হোমে থেকে পড়াশোনা করতে চায়। হামিদার দায়িত্বে থাকা বাঁকুড়া ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান শেখ মুরসালেম বলেন, “হামিদা এখন কারও কাছে ফিরতে চায় না। সে জানিয়েছে, ফের পড়াশোনা শুরু করবে। তার ইচ্ছে মতোই আমরা তাকে হোমে রেখে পড়াশোনা করাব।”
তিনি জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার বাঁকুড়া পুলিশ তাকে পুরুলিয়ার সরকারি হোমে পৌঁছে দেবে। সেখান থেকেই সে পড়াশোনা করবে। সে পুরুলিয়ার বাসিন্দা হওয়ায় সরকারি নিয়ম মেনেই তাকে সেখানকার হোমে পাঠানো হচ্ছে। গত বছর মার্চে স্থানীয় মেটালশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া হামিদার সঙ্গে নিতুড়িয়ার লছমনপুরের বাসিন্দা বিদ্যুতের মিস্ত্রি লোকমান আনসারির বিয়ে দেয় পরিবারের লোকজন। সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে নির্যাতন করত। স্বামী তাকে সম্প্রতি বাপের বাড়িতে রেখে যায়। কিন্তু হামিদার অভিযোগ, সেখানেও জোটে গঞ্জনা। ৩ মে সন্ধ্যায় বাঁকুড়া স্টেশনে তাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পান জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক নীলিমা দাস চৌধুরী। তিনি হামিদার সব কথা শুনে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। পরের দিন বাঁকুড়ার মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ের নির্দেশে হামিদাকে একটি হোমে পাঠানো হয়।
এ দিন চেষ্টা করেও হামিদার বাবা মা’র সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে হামিদার স্বামী লোকমান আনসারি বলেন, “হোমে কেন, বাড়িতে থেকেও সে পড়াশোনা করতে পারত। ওর এই সিদ্ধান্তে খুশি নই। ওকে আর ফিরিয়ে নেব না।” তবে হামিদার এই সিদ্ধান্তে খুশি নীলিমাদেবী বলেন, “বাল্য বিবাহের জন্য মেয়েটার জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এই ঘটনা থেকে এই ধরনের বাবা-মা’র শিক্ষা নেওয়া উচিত।” বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “হামিদা নতুন করে জীবন শুরু করতে চাওয়ায় আমরা খুশি।” |