একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বনগাঁ মহকুমার গোপালনগরের চৌবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েত এলাকায় শুরু হয়েছে যমুনা নদী সংস্কারের কাজ। ৫ মে থেকে শুরু হওয়া ওই কাজ চলবে বর্ষার আগে পর্যন্ত। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ তথা ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অলোক নন্দী বলেন, “এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে যমুনা নদী সংস্কার শুরু হয়েছে। এর ফলে এলাকার চাষি, খেতমজুর, মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন। এ জন্য প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ বরাদ্দ হয়েছে।” |
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় ফুলবাড়ি থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এরপর শ্যাওলাপাড়া হয়ে গোপীনাথপুরের মাঝিপাড়া পর্যন্ত কাজ হবে। বুধবার কাজ দেখতে এলাকায় গিয়েছিলেন বনগাঁর বিডিও সুশান্ত বসু, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন দত্ত, বনগাঁ উত্তরকেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল। তিনি বলেন, “বছর ২০ আগেও সারা বছর নদীতে জল থাকত। চাষের কাজে জল ব্যবহার হত। মাছচাষ হত। গরমে নদী জলশূন্য। ফলে এখন সব বন্ধ।” তিনি জানান, পঞ্চায়েত এলাকায় কৃষিজীবীর সংখ্যা ২৫০০। অন্তত ৫০০ ঘর মৎস্যজীবী আছেন। দৈনিক অন্তত চারশো শ্রমিক এই প্রকল্পে কাজ করবেন।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীটি প্রায় ৭০ ফুট চওড়া এবং ৪ ফুট গভীর করে কাটা হবে। অলোকবাবু বলেন, “প্রায় ১৮ কিলোমিটার নদীপথে মাটি কাটা হবে। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করা গিয়েছে।” এই পঞ্চায়েত এলাকায় ৫ হাজার খেতমজুর আছেন। তাঁদের জবকার্ডও আছে। এখন ধান কাটার মরসুমে কিছু কাজ থাকলেও বছরভর তেমন কাজ থাকে না। তা ছাড়া এখন নদীর বুকে চড়া পড়ে গিয়েছে। কোথাও আবার চড়াতেই ধান হয়েছে। গরমে নদীর এই হাল হলেও বর্ষায় দু’কূল ছাপিয়ে এলাকা ভাসিয়ে দেয়। ফসল, ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। কাজ শুরুর আগে তাই মৎস্যজীবী ও চাষিদের পঞ্চায়েতের তরফে বোঝানো হয়েছে। সকলেরই আশা, এ বার হয়তো নদীর হাল কিছুটা ফিরবে। বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, নদীর মাটি কাটার কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দা বৈদ্যনাথ অধিকারী, সুজন মণ্ডল, লক্ষ্মী মণ্ডল বলেন, “অন্য সময় খেতে কাজ করি। দৈনিক ৩০০ টাকা করে পাই। এখানে কাজ করে কত পাব জানি না। এলাকার স্বার্থে কাজ করছি। নদীর গভীরতা বাড়বে, সারা বছর জল থাকবে।” এই কাজের সুপারভাইজার শিখা দত্ত বলেন, “আজ ১২৫ জন কাজ করেছেন। নতুন নিয়মে ৬২ সিএফটি (কিউবিক ফুট) মাটি কাটলে ১৩৬ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আগে ৭৮ সিএফটি’র জন্য মিলত ১৩০ টাকা।” মজুরি বাড়ায় একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মানুষের আগ্রহও বাড়বে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। |