গত কয়েক মাসে খুন, অপহরণ, ডাকাতির মতো একের পর এক বড় অপরাধের ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। অথচ চার ‘ছিঁচকে’ ছিনতাইবাজকে ধরে বৃহস্পতিবার বারাসত থানায় ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক করলেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য। বড় অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই ছিঁচকে ধরে ঢোল পেটানোয় সৃষ্টি হয়েছে বিস্ময়ের।
পুলিশ সুপার বলেন, “দু’টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় চার জনকে ধরার পরে আদালতের নির্দেশে তাদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ধৃতদের কাছে পাওয়া গিয়েছে খোয়া যাওয়া মালপত্র, ২১ কিলোগ্রাম মাদক এবং দু’টি মোটরবাইক।” পুলিশ জানায়, ১৭ এপ্রিল দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা এক চিকিৎসকের কাছ থেকে নগদ টাকা ও যন্ত্রপাতি ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি ঘটে রথতলার কাছে। ওই দিনই মধ্যমগ্রামের দেবদাসপল্লির এক বাসিন্দার কাছ থেকেও কিছু টাকা ও জিনিসপত্র ছিনতাই হয়। এই দু’টি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে খড়িবাড়ির ওই চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে বারাসত পুলিশ।
ছিনতাইবাজদের গ্রেফতার করে ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক করলেও পুলিশ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বড় অপরাধগুলির কোনওটিরই কিনারা করতে পারেনি। ২৬ এপ্রিল বারাসতের হেলাবটতলা থেকে অপহরণ করা হয় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে। মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনতে হয়। বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও এখনও দোষীদের গ্রেফতার করা যায়নি। সম্প্রতি কেমিয়া কামারপাড়ায় এক তৃণমূলকর্মী এবং তাঁর মা-বাবা খুন হন। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রভাস ঢালিকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। ওই মাসেই দত্তপুকুরে ডাকাতি করতে এসে এক বৃদ্ধাকে জখম করে দুষ্কৃতীরা। সেই দিনই দত্তপুকুরে খুন হন এক ব্যক্তি। ওই দু’টি ঘটনাতেও ধরা পড়েনি কেউ। একের পর এক এই ধরনের অপরাধের ঘটনায় আতঙ্ক রয়েছে বারাসতবাসীর মধ্যে।
বিরোধী পক্ষ অবশ্য পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার পিছনে অন্য কারণ দেখছে। সিপিএমের জেলা নেতা অমিতাভ নন্দী বৃহস্পতিবার বলেন, “পুলিশ এখন শাসক দলের কথামতো চলছে বলেই কুখ্যাত অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে ওদের গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে।” তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। দলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “ওই সব অপরাধের কিনারা করার জন্য পুলিশকে একাধিক বার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দলের রং না-দেখেই দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে।”
তা হলে ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না কেন? পুলিশ সুপারের জবাব, “অপরাধীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
এ দিনই ভরদুপুরে নারকেলডাঙা এলাকায় একটি বাড়ির তালা ভেঙে নগদ ২০ হাজার টাকা ও লক্ষাধিক টাকার গয়না চুরি যায়। পুলিশ জানায়, বাড়ির কর্ত্রী রানি বেগম ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। তখন বাড়িতে তালা দেওয়া ছিল। ফিরে দেখেন, ঘরের তালা ভাঙা। আলমারির টাকা-গয়না উধাও। পুলিশের অনুমান, স্থানীয় দুষ্কৃতীরাই এই চুরির সঙ্গে যুক্ত। ওই পরিবারের সব তথ্য দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল বলেও মনে করছে পুলিশ। শিশু নিখোঁজ: হেস্টিংস থানা এলাকা থেকে তিন বছরের একটি শিশু নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। তার নাম রণবীর মল্লিক। তার বাবা মন্টু মল্লিক পুলিশকে জানান, বুধবার সকালে গঙ্গার ধারে শিশুটিকে শেষ বারের মতো খেলতে দেখা গিয়েছিল। তার পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। |