ট্রাক্টর কেনার জন্য ঋণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রায়াত্ত একটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক’ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সাগরদিঘি ব্লকের ওই ব্যাঙ্কের সাহাপুর ব্রাঞ্চের ম্যানেজার অশোককুমার শুকুল ঘটনার পর থেকেই গত তিন মাস ধরে তিনি ব্যাঙ্কে আসছেন না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানাননি তিনি। বিষয়টি জানার পরেই ওই ব্যাঙ্কের বহরমপুর জোনাল শাখা ওই অশোকবাবুকে কৈফিয়ত তলব করে চিঠি পাঠায়। কিন্তু তার কোনও উত্তরও দেননি তিনি। এই অবস্থায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। বহরমপুর জোনাল ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার তাপস অধিকারি বলেন, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তদন্তও শুরু করেছে।”
প্রায় সাত মাস আগে নামী এক কোম্পানির দুটি ট্রাক্টর কেনার জন্য ওই ব্যাঙ্কের কাছে ঋণের আবেদন করে ছিলেন সাগরদিঘির হালিমবাগ গ্রামের এক দম্পতি। ২০১১ সালের ১৫ অক্টোবর তাঁরা আবেদন করেন। আবেদনের ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ঋণ মঞ্জুরও করেন। ওই বছরই ১৪ ডিসেম্বর দুটি ট্রাক্টরের ‘ডেলিভারি অর্ডার’ পান ওই দম্পতি। পেশায় কৃষিজীবী সাদরুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসি বিবি ট্রাক্টর আনতে গিয়ে দেখেন, যে কোম্পানির ট্রাক্টর কিনতে ঋণ নিয়েছেন তাঁরা আদপে সেই কোম্পানির গাড়ি না দিয়ে অন্য একটি সংস্থার ট্রাক্টর বরাদ্দ হয়েছে তাঁদের জন্য। তার দামও বেশি।
সাদরুলের অভিযোগ, “আমরা যে ট্রাক্টরটি দেখে এসেছিলাম তার দাম ৬ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা। কিন্তু ডেলিভারি অর্ডার দেওয়ার সময়ে অন্য এক কোম্পানীর ৮ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা দামের ট্রাক্টর নেওয়ার কথা বলেন। আমরা তা নিতে অস্বীকার করি। এর পরে চুক্তি অনুযায়ী আমাদের ট্রাক্টর দিতে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার গড়িমসি করতে থাকেন। বিষয়টি ব্যাঙ্কের জোনাল অফিসে জানাই। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।”
এ দিকে দুটি ট্র্যাক্টরের ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ২৪ বিঘে জমির কাগজপত্র জমা নিয়ে নেয় সাদিরুলের। সেই সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে ৫০ হাজার টাকা করে ১ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করা ছাড়াও দুটি ট্রাক্টরের ঋণ দেওয়ার জন্য ‘মার্জিন মানি’ হিসেবে ৮৫ হাজার টাকা করে ১ লক্ষ ৭০ লক্ষ টাকাও দিতে হয়। সাদরুল বলেন, “ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ব্যাঙ্কের পাসবুক ও ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেট নিজের কাছে জমা রেখে দিয়েছেন।”
এর পরেই ওই দম্পতি ব্যাঙ্কের কলকাতার সদর কার্যালয়ে ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়েই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি গোটা বিষয়টি তদন্তের জন্য এক অফিসারকে সাহাপুর ব্রাঞ্চে পাঠায়। জমা পনে রিপোর্টও। তবে এ ব্যাপারে অশোকবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। |