বন্যার স্মৃতি বৈশাখে
পাড় বাঁধছে মরিয়া মায়াপুর
কালবৈশাখী ওদের স্বস্তি দেয় না। ওদের কাছে গরমের ঝড় অশনি সঙ্কেত। প্রতি বছরই এই সময়ে প্রাচীন মায়াপুরের বুক ঢিপ-ঢিপ।
মনে হয় এই বুঝি ধেয়ে আসবে নদী। গিলে খাবে ভিটে-মাটি। তাই বর্ষার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ধরে চলে বাঁধ তৈরির প্রস্তুতি।
তিন দশক ধরে নদী ভাঙন ঘুম কেড়েছে প্রাচীন মায়াপুরের। ছাপ ফেলেছে নবদ্বীপের মানচিত্রেও। বর্ষার শুরুতে নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুরের গঙ্গার পাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে চলে ভাঙন। কখনও মণ্ডলপাড়া, কখনও চৈতন্য কলোনি, কোনও বার মালোপারা তো কোনও বার চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ায় নদী।
নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “গঙ্গার ভাঙনে পুরসভার কয়েক শো মিটার রাস্তা, স্কুল, মন্দির, বাতিস্তম্ভ সমেত অসংখ্য বসত বাড়ি এবং বিঘার পর বিঘা জমি নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান ও আশ্রমের কাছে চলে এসেছে নদী। বিগত বছরগুলিতে নবদ্বীপকে ভাঙনের হাত থেকে স্থায়ী ভাবে রক্ষা করার জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বরং ভরা বর্ষায় যখন ভাঙন চরম আকার নিয়েছে, তখন কোনও রকমে সেচ দফতর তা ঠেকিয়েছে। তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”
ফের পড়েছে পাথর। চলছে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
সরকার বদলের পরে এ বারই প্রথম বর্ষার আগেই ভাঙন মোকাবিলার কাজ শুরু করেছে জেলা সেচ দফতর। শহরের একেবারে উত্তর প্রান্তের শেষ থেকে শুরু হয়েছে ত্রিস্তরীয় ভাঙন প্রতিরোধী পাড় বাঁধানোর কাজ। পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শেষ প্রান্ত থেকে চারটি ভাগে মোট ৩০০ মিটার গঙ্গার পাড় বাঁধানোর কাজও শেষ হয়েছে।
নদিয়া সেচ দফতরের এসডিও সুপ্রতিম রায় বলেন, “মার্চে নদীর জলস্তর একেবারে নিচে থাকে। ফলে এই সময়েই ভাঙন রোধের কাজটা সবথেকে ভাল ভাবে করা যায়। এ বারের কাজে তিনটি ধাপে প্রথম জিওম্যাট, তারপর তারের খাঁচায় বোল্ডার বেঁধে এবং সবথেকে উপরে বোল্ডার দিয়ে নদীর পাড় বাঁধানো হয়েছে। জলের চাপ কোনও নির্দিষ্ট এক জায়গায় পড়বে না। ফলে নদীর ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”
অন্য দিকে ওই এলাকার কাউন্সিলর সুকুমার রাজবংশী বলেন, “এই প্রথম সুখা মরসুমে সেচ দফতর কাজ শুরু করেছে। এর আগে নদীর ভাঙন মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় কাজ হয়েছিল ২০০৮-০৯ সালে। জিওসিন্থেটিক ম্যাট দিয়ে নদীর পাড় বাঁধানো হয়েছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে। তৎকালীন জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে কাজটা হয়েছিল ভরা বর্ষায়। জুলাই-অগস্ট মাসে। ফলে যখনই জলস্তর নেমে যায় তখনই জিওসিন্থেটিক ম্যাট বেড়িয়ে পড়ে এবং রোদে তা নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় তিন বছর ধরে ক্রমাগত সুখা মরসুমে এ ভাবেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে ওই ম্যাট।”
এই প্রথম বার আগে থাকতেই তাঁদের ভিটে মাটি বাঁচাতে সেচ দফতরের উদ্যোগে খুশি প্রাচীন মায়াপুরের বাসিন্দারা। গ্রামের আশায় বুক বাঁধছেন। আর হয়ত সর্বস্ব খাবে না নদী!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.