ভারতে পা রাখার পর থেকেই মোহনবাগানে খেলার স্বপ্ন তাঁর চোখে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে খুলেছে তাঁর স্বপ্নপুরীর দরজা। তাই দেরি হলেও, সবুজ-মেরুন জার্সি পরার সুযোগ পেয়ে আপ্লুত স্ট্যানলি ওকোরোইগি। বৃহস্পতিবার নিজের কালিকাপুরের ফ্ল্যাটে ঢোকার ঠিক আগে নাইজিরিয়ান মিডিও একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বললেন, “মোহনবাগানে খেলা আমার স্বপ্ন। যখনই বাবুঘাটের দিকে যেতাম, মোহনবাগান গেটের দিকেই তাকিয়ে থাকতাম। ভাবতাম এক দিন না এক দিন এই ক্লাবে নিশ্চয় খেলব। আমার অনেক কঠিন সময় গিয়েছে। তা সত্ত্বেও নিজের ওপর কোনও দিন বিশ্বাস হারাইনি। এত দিন ধরে যে পরিশ্রম করছিলাম, তার সুফল পেলাম।”
এখন প্রশ্ন হল, ওডাফা-টোলগের পাশে আরও এক জন স্ট্রাইকার কী হবে? দু’বছর আগে চিডি-মুরিতালা-ব্যারেটোকে একসঙ্গে রেখে যে ভুল করেছিল মোহনবাগান, সেটারই কি আবার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? স্ট্যানলি মানতে চাইলেন না। তাঁর দাবি, “আমি অলরাউন্ডার। যে কোনও জায়গায় খেলতে পারি। দলের স্বার্থে আমাকে যেখানে খেলানো হবে, সেখানেই খেলব। মাঝমাঠ ও স্টপারেও খেলতে পারি। ভারতে এই দুটো পজিশনেই খেলেছি। কোনও অসুবিধা নেই।” |
যত দিন নাইজিরিয়ায় খেলেছেন, স্ট্রাইকার হিসেবেই খেলেছেন। ভারতে এসেই প্রথম জায়গা বদল। এই ছ’বছরে এমন কোনও জায়গা বাকি নেই, যেখানে খেলেননি স্ট্যানলি। পোর্ট ট্রাস্টে ডিফেন্সিভ মিডিও দিয়ে শুরু। তার পরে এক বছর চিমা ওকেরির নিউ দিল্লি হিরোজে স্টপার। কলকাতায় ফিরে আবার রঘু নন্দীর এরিয়ানে স্ট্রাইকার। অলোক মুখোপাধ্যায়ের মহমেডানে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। স্ট্যানলি অবশ্য বললেন, “আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে। ওখান থেকে গোল করার সুযোগও থাকে, বল সাপ্লাইয়ের কাজটাও করতে পারি। ভাল লাগছে মোহনবাগানে আমি আমার পছন্দের জায়গায় খেলতে পারব।”
নাইজিরিয়ায় যে রাজ্য থেকে উঠে এসেছেন স্ট্যানলি, সেই ইমোর বেশ কিছু জয়প্রিয় ফুটবলারের মধ্যে অন্যতম চিমা ওকেরি, পেন ওরজি এবং ফেলিক্স। স্ট্যানলির আদর্শ ফুটবলার অবশ্য চিমা। যাঁর কথা মুখে আসতেই বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন, “চিমা আমার বড় ভাইয়ের মতো। ও না থাকলে ফুটবলার হতে পারতাম না। আমার দুর্ভাগ্য, চিমার খেলা দেখার সুযোগ পাইনি। কিন্তু এক বছর নিউদিল্লি হিরোজে খেলার সময় প্রচুর কিছু শিখেছি চিমার থেকে। ফুটবল জীবনে যা কখনও ভুলব না।” চিমাকে কঠিন সময়ের সঙ্গী বললেও, অলোক মুখোপাধ্যায় ও রঘু নন্দীর প্রশংসাও শোনা গেল স্ট্যানলির গলায়। বললেন, “কলকাতায় একটা সময় যখন সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন অলোক আর রঘুই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল। ওদের কোচিংয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি।”
নতুন ক্লাবে স্ট্যানলির দুই সতীর্থ হচ্ছেন ওডাফা ওকোলি এবং টোলগে ওজবে। ভারতীয় ফুটবলের দুই মহা তারকার পাশে খেলবেন বলে দারুণ উচ্ছ্বসিত স্ট্যানলি। এমনকী মোহনবাগানের শুরুতেই যে এত বড় ফুটবলারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাবেন, সেটাও ভাবতে পারেননি স্ট্যানলি। বললেন, “ওডাফা খুব বড় মাপের ফুটবলার। ওর থেকে অনেক কিছু শিখতে চাই। টোলগেও ভাল ফুটবলার। আমার বিশ্বাস, পরের বছর আমাদের ত্রিমূর্তি নিশ্চয়ই সফল হবে। মোহনবাগানকে ট্রফি দিতে চাই।” |