সচিন তেন্ডুলকরকে সম্মান আছে, কিন্তু টেনশন নেই। অঙ্ক আছে, আতঙ্ক নেই। ৫ মে-র পর আরও একটা ‘হাইপ্রোফাইল’ ম্যাচ নিয়ে শহরজুড়ে যখন তিরতিরে উত্তেজনা, সচিন-বন্দনার অনুষ্ঠানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, নাইট শিবিরের চেহারা তখন ঠিক এ রকম।
কী রকম? দু’একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। বিকেল চারটে। নতুন হেয়ারস্টাইল, চোখে সানগ্লাস চাপিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে হোটেলে ঢুকছেন ‘লিটল মাস্টার’। নিরাপত্তারক্ষীদের ‘কর্ডনে’ মোড়া একটু পিছনে বাকি মুম্বই টিম। ঠিক ওই সময়, ওই হোটেলেরই ব্যাঙ্কোয়েট হলে পাশাপাশি বসে ব্রেট লি আর মার্শাল ডি’ল্যাঞ্জ। আলোচ্য বিষয়‘স্পিডোমিটারে’ কে এগিয়ে? লি-র রেকর্ড ঘণ্টায় ১৬০.৮ কিলোমিটার শুনে ডি’ল্যাঞ্জের উত্তর, “অত তুলতে পারিনি এখনও। যাক, একটা নতুন টার্গেট হল।” কয়েক হাত তফাতে ততক্ষণে চালু মনোজ-লক্ষ্মীর ঠাট্টা-ইয়ার্কি। মনোজের ঘড়ি-প্রীতির কথা টেনে লক্ষ্মী বলছেন, “এয়ারপোর্টে কোনও ঘড়ির দোকান দেখলেই হল। মনোজ সঙ্গে সঙ্গে ছুটবে।” |
অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর দু’দিনের ছুটিতে দিল্লিতে। বৃহস্পতিবার রাত বা শুক্রবার সকালে যোগ দেবেন টিমের সঙ্গে। সাকিব বাংলাদেশ থেকে ফিরছেন শুক্রবার। বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রম আবার পারিবারিক কারণে উড়ে গিয়েছেন পাকিস্তান। আসছেন মুম্বই ম্যাচের পর। টিমের ‘ঐচ্ছিক’ প্র্যাক্টিসে ডি’ল্যাঞ্জ-পাঠানদের মতো কাউকে কাউকে দেখা গেল বটে, কিন্তু সুনীল নারিনদের মতো কেউ কেউ আবার বেরিয়ে পড়লেন শপিং মলে। সঙ্গী মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পোলার্ড ও ডোয়েন স্মিথ।
এক কথায়, ফুরফুরে মেজাজ। কিন্তু একই সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অঙ্কও। কেকেআর কোচ ট্রেভর বেলিস যেমন। মুম্বই ম্যাচের আগে মিটিয়ে ফেলতে চান টিমের মিডল অর্ডার নিয়ে সমস্যাকে। আর সচিন? তাঁকে নিয়ে যে শুক্রবারের টিম মিটিংয়ে আলাদা একটা পর্বই থাকবে, সেটা তো মোটামুটি বলেই দিলেন নাইট কোচ। “টিমের ভারতীয় প্লেয়ারদের নিয়ে বসব। ওরা তো জানে সচিনের কোথায় শক্তি, কোথায় দুর্বলতা। সচিন তো আর প্রতিপক্ষ হিসাবে সহজ নয়,” বলছিলেন বেলিস। ভারতীয় প্লেয়ার মানে, গম্ভীর। পাঠান। টিমের এক সদস্য আবার দুপুরে হিসাব দিলেন, এই টিমটা গেইলের বিরুদ্ধে খেলে জিতেছে। ধোনির চেন্নাইকে চেন্নাইয়ে হারিয়েছে। আর রোজই তো কোনও না কোনও মহাতারকার সামনে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু সব সামলে টিম এক নম্বরে (রাতে দিল্লি অবশ্য ডেকানকে হারিয়ে এক নম্বরে উঠে আসে)। তা হলে সচিনকে নিয়ে বাড়তি ভাবা হবে কেন?
সচিনকে নিয়ে কেকেআরের ভাবনা এক রকম। রাজ্য সরকার-সিএবি-র আবার অন্য। হোটেলের বিশেষ সুইট থেকে এ দিন আর বেরোননি ‘লিটল মাস্টার’। তাঁর জানার উপায় ছিল না শনিবারের ইডেনে তাঁর শততম সেঞ্চুরির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে কর্মকাণ্ড কোন স্তরে পৌঁছেছে। নির্ঘন্ট মোটামুটি প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসে যাচ্ছে সচিনের একশো কাটআউট। ইডেনের বাইরেও বসছে একটা। চৌষট্টি হাজার দর্শকের হাতে সে দিন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিএবি-র পোস্টার। মজুদ রাখা হচ্ছে একশো বল। যা সচিনকে অনুরোধ করা হবে, গ্যালারির দিকে ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও শনিবার ইডেনে হাজির থাকবেন রাজ্যের আরও তিন মন্ত্রী। সিএবি-র একশো গিনি, চিত্রকর সনাতন দিন্দার ছবি সচিনের হাতে তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রীই। সচিনকে দেওয়া হচ্ছে ধুতি-পাঞ্জাবি। স্ত্রী অঞ্জলির জন্য উপহার শাড়ি। |
শুধু একটাই যা আফসোস সিএবি-র। হেলিকপ্টারের বন্দোবস্ত করেও ফুল-বৃষ্টি সম্ভব হচ্ছে না। দু’দিন আগে ভেঙে পড়েছে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার কপ্টার। এবং সেই ভয়ে হেলিকপ্টারের অনুমতি নাকচ। |