সঙ্গকারা ও ভেত্তোরির পরে এ বার কি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পালা? প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘পারফর্ম’ করতে না পারা ডেকান আর চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়কের মতো পুণের ক্যাপ্টেনকেও কি কাল দেখা যাবে মাঠের বদলে ডাগআউটে? গত চব্বিশ ঘণ্টার নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহে যা ইঙ্গিত, কাল বেঙ্গালুরু ম্যাচে হয়তো বসতে হচ্ছে সৌরভকে।
তবে এই দু’জনের কাহিনির চেয়ে সৌরভেরটা সামান্য আলাদা। বাকি তিনটে গুরুত্বহীন ম্যাচের কোনটায় খেলবেন, কোনটায় বসবেন, পুরোপুরি তাঁর উপর। তবে একটা ম্যাচে তাঁকে বসতে হবেই। কাল পুণে বনাম বেঙ্গালুরু ম্যাচে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ই যে মাঠে টিম লিস্ট নিয়ে টস করতে নামবেন, এ নিয়ে বাজি ধরার লোক দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
লিগের বাকি ম্যাচগুলো খেলবেন কি না, আদৌ আর পুণের অধিনায়ক থাকবেন কি না, সে সব নিয়ে গত কাল থেকে তৈরি হওয়া সংশয় কাটছে না পুরোপুরি। এক দিকে হারতে থাকা টিমকে দিশা দেখানো আর তারই পাশাপাশি মহাতারকা অধিনায়ককে যথাসম্ভব সম্মানজনক ‘বিদায়সূত্র’-র হদিশ দেওয়া এই দুইয়ের টানাপোড়েনে সারা দিন আচ্ছন্ন থাকলেন পুণে ওয়ারিয়র্স কর্তৃপক্ষ। বিভ্রান্তি আরও বাড়ল যখন সৌরভ বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে, “আমি যত দূর জানি, আমি এখনও ক্যাপ্টেন’’ বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হল স্বয়ং সহারাশ্রী সুব্রত রায়ের বিবৃতি। যাতে বলা হল, গুরুত্বহীন বাকি তিনটি ম্যাচে জুনিয়রদের সুযোগ দিতে সরে দাঁড়াতে চাইছেন সৌরভ। পরের মরসুমে খেলোয়াড় নয়, মেন্টর হিসেবেই থাকতে চান তিনি।
লখনউ থেকে দেওয়া সুব্রত রায়ের বিবৃতিতে পরিষ্কার, সম্মানজনক সমাধানসূত্র বলতে সৌরভকে পরের বছর মেন্টর হিসেবেই চাইছে পুণে। বিবৃতি থেকে এটাও পরিষ্কার, ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ আর ক্রিকেটার সৌরভকে চাইছেন না। রাতে পুণের টিম হোটেলে বসে পুণে ফ্র্যাঞ্চাইজির শীর্ষ কর্তা অভিজিৎ সরকার আনন্দবাজারকে বললেন, “আমরা খুশি সৌরভ নিজে থেকে এগিয়ে এসে জুনিয়রদের সুযোগ দিতে চেয়েছে। সঙ্গকারা একটা ম্যাচে বসেছিল। ড্যানিয়েল ভেত্তোরিও তাই করেছে। সৌরভ নিজে জানিয়েছে, যারা আগে খেলেনি, আগামী তিন ম্যাচে তাদের খেলাতে চায় ও। যেমন তামিম ইকবাল।” তা হলে কি সৌরভ পরের তিনটে ম্যাচে খেলছেন না? ফ্র্যাঞ্চাইজি-কর্তার উত্তর, “তিনটে ম্যাচের কোনটায় বসবে, কোনটায় খেলবে, সেটা ও-ই ঠিক করবে।”
সহারাশ্রীর বিবৃতিতে আবার বলা হচ্ছে, জুনিয়রদের সুযোগ দিতেই শেষ ক’টি ম্যাচে সৌরভ সরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। বিবৃতিতে আরও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, সৌরভ এ বার মেন্টরই থাকতে চেয়েছিলেন। স্বয়ং সহারাশ্রীর অনুরোধে আইপিএল খেলতে রাজি হন। সহারাশ্রী আরও জানিয়েছেন, টিমের খারাপ
পারফরম্যান্সের জন্য কর্তৃপক্ষ মোটেই সৌরভকে দায়ী করছেন না। বরং বলা হচ্ছে, উপযুক্ত ভারতীয় প্রতিভা ছিল না বলেই টিমের এই হাল।
অধিনায়ক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগের অভাব হচ্ছিল সেই কেকেআর ম্যাচ থেকেই। ইডেনে সৌরভকে সাত নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হয়। হতাশ সৌরভ সেই দিনই হারের দায় নিয়ে সরে যেতে চেয়েছিলেন। কর্তারা তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তখনকার মতো রাজি করালেও রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে হারের পর সঙ্কট ঘনীভূত হয়। যে পুণে পরপর দুটো ম্যাচ জিতে শুরু করেছিল, যেখানে অমিতাভ বচ্চন খেলা দেখতে এসেছিলেন সৌরভের টিমের, অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর আলাপও করিয়ে দিয়েছিলেন সুব্রত রায়, তার যে লিগ শেষে এই অবস্থা দাঁড়াবে, তা ভাবতে পারেননি অনেকেই।
অন্যতম শীর্ষ কর্তা অভিজিৎ সরকার বরাবর সৌরভের পাশে ছিলেন। বলছিলেন, “বলতে পারেন, পরের বারও সৌরভ আমাদের সঙ্গে থাকছে। আর পরের বার ও খেলবে কি খেলবে না, সেটাও ও ঠিক করবে।” কী দাঁড়াল তা হলে? মধুরেণ সমাপয়েৎ? মোটেই না, বলছেন বড় অংশই। আসলে লাগাতার হারতে থাকা একটা টিমের হতাশ কর্তাদের সঙ্গে ক্যাপ্টেনের ক্রমে বাড়তে থাকা মানসিক দূরত্বের অনিবার্য পরিণতি। ব্যাপারটা তিক্ততার দিকে গড়ানোর আগেই মরিয়া সমাধানসূত্র উদ্ভাবন করে বহির্বিশ্বে জানান দেওয়ার চেষ্টা হল, ‘সব ঠিক হ্যায়।’। সব ঠিক যে নেই, তা অবশ্য ঘটনাপ্রবাহ থেকেই পরিষ্কার।
অন্য কেউ হলে স্বচ্ছন্দে লিখে দেওয়া যেত, এটাই সংশয়াতীত ভাবে সৌরভের শেষ আইপিএল। কিন্তু ব্যক্তির নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেই লেখা যাচ্ছে না। নিশ্চিত ক্রিকেটভস্ম থেকে অকল্পনীয় প্রত্যাবর্তনের এত নজির তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারে, কে আর পূর্ণচ্ছেদ টানার সাহস দেখাবে? কোথাকার জল কোথায় গড়াবে, সৌরভের ক্ষেত্রে কে আর কবে আন্দাজ করতে পেরেছে? |