|
|
|
|
এখনও শুরু হয়নি মাস্টার-প্ল্যানের কাজ |
গরম পড়তেই জলকষ্ট রেলশহরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
সকাল থেকেই কলের সামনে লম্বা লাইন। হাঁড়ি, কলসি, বালতি, বোতল, জলের ক্যান হাতে ঝাঁ-ঝাঁ রোদে দাঁড়িয়ে পুরুষ-মহিলা থেকে কিশোর-বৃদ্ধা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইন দীর্ঘতর হচ্ছে। জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে পড়শিদের মধ্যে অশান্তিও হচ্ছে অহরহ।
গরমে রেলশহর খড়্গপুরের বিভিন্ন এলাকায় এই একই ছবি। রেলশহরে পানীয় জলের সঙ্কট অবশ্য নতুন নয়। প্রতি বার গ্রীষ্মেই পানীয় জলের জন্য হাহাকার পড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, খড়্গপুর পুর-এলাকায় প্রতিদিন জল লাগে সাড়ে ৩ মিলিয়ন গ্যালন। কিন্তু পুরসভার যা পরিকাঠামো, তা দিয়ে দেড় থেকে বড় জোর ১.৭৫ মিলিয়ন গ্যালন জল তোলা যায়। প্রয়োজনের অর্ধেক জল সরবরাহ করলে সঙ্কট যে দেখা দেবেই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুরপ্রধান জহরলাল পালও স্বীকার করে নিয়েছেন, “শহরে যে পরিমাণ জল প্রয়োজন তার অর্ধেক বা কিছুটা বেশি জল তোলার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। এই কারণেই জল-সঙ্কট।” |
|
গরমের খড়্গপুরে চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র। |
সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বহু বছর ধরেই মাস্টার-প্ল্যান রূপায়ণের কথা বলে আসছে পুরসভা। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ হয়নি আজও। এ বার অবশ্য দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের আশ্বাস দিয়েছেন পুরপ্রধান। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ‘ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ড’ থেকে পানীয় জল প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। পুরপ্রধান বলেন, “শীঘ্রই এই প্রকল্পে কাজ শুরু হয়ে যাবে। যাতে আগামী গ্রীষ্মে মানুষকে আর না কষ্ট পেতে হয়, সে জন্য দ্রুত কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” এই প্রকল্পে প্রথমেই ১০টি জলাধার তৈরি করা হবে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। নতুন এলাকাগুলির যে সব জায়গায় জলের পাইপলাইন পৌঁছয়নি সেখানে পাইপলাইন তৈরি হবে। পুরসভার দাবি, এ বার এত বেশি জল তোলা সম্ভব হবে যা শহরের প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সেই জল বিক্রি করেও পুরসভা আয় করতে পারবে। পুরপ্রধানের দাবি, “নতুন প্রকল্পে দিনে সাড়ে ১৩ মিলিয়ন গ্যালন জল তোলা সম্ভব হবে। প্রতিদিন খড়্গপুর শহরে পানীয় জলের প্রয়োজন হয় সাড়ে ৩ মিলিয়ন গ্যালন। অর্থাৎ দিনে ১০ মিলিয়ন গ্যালন জল বেশি তোলা যাবে। যা দিয়ে শিল্পতালুক থেকেও আয় বৃদ্ধি করতে পারব।”
তবে যত দিন না প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে তত দিন খড়্গপুরবাসীর জল-সঙ্কট থেকে মুক্তি নেই। এই পরিস্থিতিতে বেআইনি ভাবে খড়্গপুর শহরে গড়ে উঠছে একাধিক গভীর ও অগভীর নলকূপ। পুরসভা কেবলমাত্র জরিমানার ভিত্তিতে সেই সব নলকূপকে বৈধতা দিচ্ছে। পুর-কর্তৃপক্ষের মতে, প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করতে পারলে নলকূপ তৈরির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যেত। বাধ্য হয়েই নলকূপ তৈরিতে বাধা দেওয়া যায়নি।” এই নলকূপ যে ভবিষ্যতে শহরকে বিপদে ফেলবে তা সকলেরই জানা। কারণ, যত বেশি নলকূপ হবে, ততই জলস্তর নামতে থাকবে। এক সময়ে সেখান থেকে জল তোলাই কঠিন হয়ে যাবে। পুরসভা অবশ্য জল তুলবে কাঁসাই নদী থেকে। অ্যানিকেত তৈরি হয়ে গেলে ততটা সমস্যা হবে না। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মাস্টার-প্ল্যান রূপায়ণের পরে আর কাউকে নতুন করে গভীর বা অগভীর নলকূপ তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না। |
|
|
|
|
|