কুড়ি বছরের পুরনো হেলিকপ্টার নিয়ে ‘ভিভিআইপি’ পরিবহণের ‘ব্যবসা’ কী ভাবে করছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা? কেনই বা ঝাড়খণ্ড প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এত পুরনো হেলিকপ্টার ভাড়া নিচ্ছিল? কাল ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডাকে নিয়ে আরিয়ান অ্যাভিয়েশনের অগস্টা-১০৯সি রাঁচি বিমানবন্দরে আছড়ে পড়ার পর এই দু’টি প্রশ্ন উঠেছে। কাল অবিশ্বাস্য ভাবে প্রাণে বাঁচেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইতালিতে তৈরি ‘অগস্টা-১০৯সি’ হেলিকপ্টার যে সংস্থা ঝাড়খণ্ড সরকারকে ভাড়া দেয়, সেই আরিয়ান অ্যাভিয়েশনের এগ্জিকিউটিভ পাইলট, ক্যাপ্টেন আর কে নেগি বৃহস্পতিবার জানান, এই হেলিকপ্টারটি ২০০৯-এ তাঁরা কিনে ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির খোলনলচে বদলে ফেলেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত হেলিকপ্টারটি ৭০০ ঘণ্টা উড়েছে। ২০১০-এ ঝাড়খণ্ড সরকার আরিয়ান-এর কাছ থেকে হেলিকপ্টারটি ভাড়া নেয়। ২০১০-এর অগস্ট মাসে একবার এই হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। এই বছরের ২৭ এপ্রিলও মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে জামশেদপুরে এক বার জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয় হেলিকপ্টারটি। তার পরে বুধবারের ঘটনা। প্রশ্ন উঠেছে, বার বার দুর্ঘটনার মুখে পড়া, পুরনো এই হেলিকপ্টার কেন ব্যবহার করা হচ্ছিল। তা-ও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য?
ঘটনার তদন্তে নেমেছেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর দুই অফিসার সানিত কুমার এবং হরিনারায়ণ মিশ্র। দুর্ঘটনার পরে কোনও বিমান বা হেলিকপ্টার থেকে ব্ল্যাক বক্স পাওয়া যায়। এই ব্ল্যাক বক্স বা ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ও ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থেকে অনেক তথ্য তদন্তকারীরা পান। এই হেলিকপ্টার থেকে সেই ব্ল্যাক বক্সও পাওয়া যায়নি। আরিয়ানের ক্যাপ্টেন নেগি-র কথায়, “৩৮০০ কিলোগ্রামের কম ওজনের হেলিকপ্টার হলে ব্ল্যাক বক্স থাকাটা জরুরি নয়। অনেক হেলিকপ্টারেই নেই। আমাদেরটাতেও ছিল না।”
দুর্ঘটনা কেন ঘটল? রাঁচি বিমানবন্দর সূত্রের খবর, হেলিকপ্টারের দিক নির্দেশক যন্ত্রই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। কাল সন্ধ্যায় রাঁচি পৌঁছে তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেন হেলিকপ্টারের পাইলট বিপুল কুমার সিংহ-এর সঙ্গে। প্রাথমিক ভাবে খবর, যে যন্ত্রের সাহায্যে হেলিকপ্টারের বাঁ-দিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেটিই বিগড়ে গিয়েছিল। এই অবস্থায়ও হেলিকপ্টারকে রাঁচি রানওয়ের মাথা পর্যন্ত নিয়ে আসতে সক্ষম হন পাইলট বিপুল। হেলিকপ্টার কেন গতি কমিয়ে নামার চেষ্টা করল না? ক্যাপ্টেন নেগির যুক্তি, গতি যত কমিয়ে আনা হবে হেলিকপ্টার তত নেমে আসবে মাটির কাছে। মাধ্যাকর্ষণ বেশি করে তাকে নীচে টানবে। তখন আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রই যদি বিগড়ে যায় তা হলে কোনও উপায় থাকে না।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী-সহ দুর্ঘটনায় জখম ছ’জনই ভাল আছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ডান গোড়ালিতে চিড় ধরা পড়েছে। চোট আছে কোমরে, শিরদাঁড়ায়। |