রাজ্যসভায় দুর্গন্ধ-বিচার,
মুলতুবি অধিবেশন
রাজসভা আর রাজ্যসভায় যেটুকু তফাৎ। আর গন্ধটাও এসেন্স-এর নয়! নইলে বাদ বাকিটা এক্কেবারে ‘গন্ধ বিচার’ পর্ব!
বৃহস্পতিবার ‘দুর্গন্ধে’র প্রকোপে দু’-দু’বার মুলতুবি হয়ে গেল রাজ্যসভার অধিবেশন!
এত দিন ছিল বিদ্যুতের সমস্যা। কখনও মৌমাছির আতঙ্ক। গত সোমবার বেশ কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল সংসদের উচ্চকক্ষে। কাজ চালানো হয়েছিল এমারজেন্সি আলোয়। তার উপরে সংসদের দোতলার বারান্দার ছাদেই মৌমাছিদের বাস। গত কালই তাদের নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন সাংসদেরা। বাস্তবিক! মৌমাছির হুল জনপ্রতিনিধিদের রেয়াত করবে, এমন নিশ্চয়তা কোথায়? কিন্তু তাই বলে দুর্গন্ধের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই।
তখন দুপুর সাড়ে এগারোটা। রাজ্যসভায় চলছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। উপস্থিত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন তাঁর দফতরের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ স্বামী। হঠাৎই অগপ সাংসদ বীরেন্দ্র বৈশ্য এক হাতে নাক চেপে ধরে অন্য হাতটি বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের কাঁধে রেখে প্রশ্ন করলেন, “আপনি কি কোনও গন্ধ পাচ্ছেন?” রবিশঙ্কর বলে উঠলেন, “হ্যাঁ পাচ্ছি। আপনি পাচ্ছেন?”
দুর্গন্ধ ততক্ষণে ধেয়ে গিয়েছে শাসক দল কংগ্রেসের দিকে। নেতারা উসখুস করছেন। কেউ রুমাল দিয়ে নাক চাপছেন, কেউ হাত দিয়ে। কংগ্রেস নেতা-মন্ত্রীদের এই ছটফটানি নজরে পড়েছে সংসদ সভাপতি হামিদ আনসারির। তিনি জানতে চাইলেন, ব্যাপারখানা কী? সাংসদরা সমস্বরে বললেন, “স্যার! দুর্গন্ধ!” কী কাণ্ড! “ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে। অধিবেশন তা হলে মুলতুবি রাখি,” বলে ১৫ মিনিটের জন্য সভা মুলতুবি করে দিলেন আনসারি।
কীসের গন্ধ? কোথা থেকে আসছে? এক সাংসদ বললেন, “মনে হয় নদর্মা বা ময়লার গন্ধ!” জয়া বচ্চন বললেন, “ধুৎ! গন্ধটা আসছে শৌচাগার থেকে। কী করে যে সবাই অন্য কিছু বলছে বুঝছি না!” রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন তা মানবেন কেন? তাঁর মতে, গন্ধটা অবিকল রান্নার গ্যাসের মতো। কী আপদ! রাজ্যসভার কক্ষ ‘গ্যাস-চেম্বার’ হয়ে উঠল নাকি? রবিশঙ্কর প্রসাদ ছদ্ম গাম্ভীর্য নিয়ে বললেন, “আমরা পরমাণু নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলি। কিন্তু সংসদের নিরাপত্তার ব্যাপারেই কারও হেলদোল নেই।” সিপিআই-এর ডি রাজার দাবি, তিনি সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন! ঠিকই তো! গন্ধ অতি বিষম বস্তু! ‘রাজা’-র শ্যালক চন্দ্রকেতুও ভয় পেয়েছিল। বলেছিল, “গন্ধ শুঁকে মরতে হবে, এ আবার কী আহ্লাদ!” দুর্গন্ধ ছাপিয়ে ভেসে আসে রাজীবপ্রতাপ রুডির অভিমান ভরা কণ্ঠস্বর “আমি তো কবে থেকেই বলে আসছি এখানে কেমন একটা দুর্গন্ধ আসে। আমার কথা কেউ পাত্তাই দেয় না!”
হামিদ আনসারি ততক্ষণে পূর্ত দফতর আর সংসদের নিরাপত্তারক্ষীদের নির্দেশ দিয়েছেন, গন্ধের উৎস সন্ধান করুন! কিন্তু কাজের কাজ অবশ্য কিছুই হল না। আঁতিপাঁতি খুঁজেও মিলিল না সূত্র! কর্মীরা রীতিমতো ধমক খেলেন! ১৫ মিনিট পর আবার শুরু হল অধিবেশন। অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্বে তখন ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন। কিন্তু তখনও থামেনি দুর্গন্ধ-প্রবাহ। ফলে ফের ১৫ মিনিটের জন্য সভা মুলতুবি!
সত্যিই গন্ধটা এল কোথা থেকে? নিশ্চিত ভাবে কোনও কিছু না বলা গেলেও সংসদ সূত্রে খবর, সম্ভবত এটি নর্দমারই দুর্গন্ধ। এসি ডাক্ট বেয়ে গন্ধ ঢুকে পড়েছিল রাজ্যসভার কক্ষে। আবার যদি এমন হয়? মণিশঙ্কর আইয়ার বলেন, “এ বার থেকে দেখছি সংসদে নাকে রুমাল দিয়ে আসতে হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.