পিছোল বিমা বিল নিয়ে সিদ্ধান্তও
তৃণমূলের আপত্তিতে স্থগিত দু’টি বিল
বিমা বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আজ পিছিয়ে দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে তৃণমূলের আপত্তির জেরে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিলে অনুমোদন দেওয়া স্থগিত রাখা হল। এই দু’টি বিলে রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ তুলেছে শাসক জোটের অন্যতম শরিক দল।
সরকারি সূত্রের খবর, কয়লা ক্ষেত্রে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরির জন্য বিল কেন্দ্রী। মন্ত্রিসভার বিবেচনার জন্য নিয়ে এসেছিল কয়লা মন্ত্রক। তৃণমূলের আপত্তিতে ওই বিলটি মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসে আর্থিক মদত রোখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বেআইনি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ আইনে (ইউএপিএ) একটি সংশোধন আনার প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তৃণমূলের আপত্তিতে এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়।
অন্য দিকে, বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াও আজ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ২৬% থেকে ৪৯%-এ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব জানিয়ে বিল নিয়ে এসেছিল প্রথম ইউপিএ-সরকার। তার প্রবল বিরোধিতা করে সে সময় তাদের সমর্থক বামেরা। এর পর দীর্ঘদিন বিলটি অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছেই পড়ে ছিল। শেষে বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহার নেতৃত্বাধীন স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করে, ঊর্ধ্বসীমা ২৬%-ই রেখে দেওয়া হোক। কমিটির সুপারিশ খারিজ করে দিয়ে ৪৯% বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দিলে সংসদে তা পাশ করাতে কেন্দ্রকে বেগ পেতে হত। সেই কারণেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হল।
আর্থিক ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে যে তিনটি বিলকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে মনমোহন সিংহের সরকার, তার মধ্যে বিমা বিল অন্যতম। বাকি দু’টি হল ব্যাঙ্ক ও পেনশন তহবিলে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেওয়া সংক্রান্ত বিল। আজ মন্ত্রিসভার সামনে একটাই রাস্তা খোলা ছিল, বিদেশি বিনিয়োগের হার ২৬%-ই রেখে দিয়ে অন্য বিষয়গুলি পাশ করিয়ে নেওয়া। কিন্তু শেষে ঠিক হয়, বিদেশি বিনিয়োগের হারই যখন বাড়ানো যাচ্ছে না, তখন এ নিয়ে আলোচনার কোনও অর্থ হয় না। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “২৬% বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন এখনই রয়েছে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আপাতত স্থগিত রাখা হল।”
ইউএপিএ সংশোধনের বিরুদ্ধে আজ মন্ত্রিসভায় সরব হন মুকুল রায়। এই আইনে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রকে (এনসিটিসি) রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে গ্রেফতার বা তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে আগেই আপত্তি তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা ও অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তিতে এনসিটিসি আপাতত বিশ বাঁও জলে। আজ সেই ইউএপিএ-তেই সংশোধন করে সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদতের ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু মুকুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তাই এই ধরনের আইনে সংশোধনের ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা জরুরি।
এই বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও অবশ্য প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। আইনের সংশোধিত বিলে ‘অবিভক্ত হিন্দু পরিবার’-এর উল্লেখ করা হয়। যা নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, ব্যক্তিগত আয়কে অবিভক্ত হিন্দু পরিবারের আয় হিসেবে দেখিয়ে অনেকেই আয়কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই কারণ আয়কর আইনে বা আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনেও (মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট) হিন্দু পরিবারের উল্লেখ রয়েছে। একই ভাবে দেশের ভিতর বা বিদেশ থেকে সন্ত্রাসে আর্থিক মদত রুখতেও অবিভক্ত হিন্দু পরিবারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পাল্টা যুক্তি ছিল, পরিবারের কেউ সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়লে তার জন্য গোটা পরিবারকে টেনে আনা উচিত নয়। স্থায়ী কমিটির মতো মন্ত্রিসভাতেও বিলের বিরোধিতায় অনড় থেকেছে তৃণমূল।
কয়লা ক্ষেত্রে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরির জন্য ‘কোল রেগুলেটরি অথরিটি বিল’-এও আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। কয়লা মন্ত্রকের প্রস্তাব, কয়লার ব্লক বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনার জন্য এই সংস্থা তৈরি হোক। আকরিক কয়লার মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি খননের অনুমতি দেওয়া, খনিতে নজরদারি ও কোনও কয়লা খনি বন্ধ করে দেওয়ার অধিকারও থাকবে এই সংস্থার হাতে। এর ফলে কয়লা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আসতেও সুবিধা হবে বলে কয়লা মন্ত্রকের যুক্তি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থার হাতে এত বেশি প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে আপত্তি ওঠে। তৃণমূলের বক্তব্য, কয়লা উৎপাদনকারী রাজ্যের ক্ষেত্রে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাজ্যেরও মতামত নেওয়া প্রয়োজন। অন্য মন্ত্রীদেরও অবশ্য এ বিষয়ে আপত্তি ছিল। বিলটি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি পৃথক মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.