টেলিকম সংস্থা এয়ারসেল ও ম্যাক্সিস-এর চুক্তি থেকে পুত্র কার্তি লাভবান হয়েছেন, গুরুতর এই অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে আরও চাপে ফেলতে চাইছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি সাংসদরা আজ তুমুল হইহল্লা করেন লোকসভায়। এক সময়ে অধিবেশন মুলতুবিও হয়ে যায়। কিন্তু কক্ষের মধ্যে চিদম্বরমের পক্ষে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় যে ভাবে ফেটে পড়েন, তাতে বিজেপিও হকচকিয়ে যায়। কারণ, চিদম্বরমের সঙ্গে প্রণববাবুর শীতল সম্পর্কের কথা সকলেরই জানা। এমনকী তাঁর অর্থ মন্ত্রকে আড়ি পাতার জন্যও প্রণববাবু এক বার চিদম্বরমের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে নালিশ করেছিলেন। এ দিন শেষ পর্যন্ত প্রণববাবুকে শান্ত করতে এগিয়ে আসেন সনিয়া গাঁধী। মেজাজ হারানোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন প্রণববাবু।
ক’দিন আগে জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী সাংবাদিক বৈঠক করে চিদম্বরম-পুত্রের বিরুদ্ধে টেলিকম কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ করেন। স্বামীর অভিযোগ, অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন চিদম্বরম এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তির ফাইল দীর্ঘদিন আটকে রেখেছিলেন। তাঁর পুত্র কার্তি এরই মাঝে এয়ারসেলের শেয়ার কেনেন। তার পর ওই চুক্তিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর ফলে কার্তির ২৬ লক্ষ টাকা মুনাফা হয়। |
সুব্র্যহ্মণ্যমের তোলা এই অভিযোগই আজ লোকসভায় উত্থাপন করেন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিবৃতি দাবি করেন তিনি। বিজেপির বাকি সাংসদরাও একই দাবিতে সরব হন। কিন্তু বিরোধীদের দাবি মানতে রাজি হননি লোকসভার নেতা প্রণববাবু। উল্টে রাগে ফেটে পড়েন তিনি। বলেন, “জবাব দিতে আমাকে আপনারা বাধ্য করতে পারেন না। এটা নিয়ম-বিরুদ্ধ। আমি জবাব দেব না।” প্রণব এতটাই রেগে যান যে পাশে বসে থাকা সনিয়া গাঁধী তাঁকে শান্ত করতে চেষ্টা করেন। কংগ্রেস সভানেত্রী তাঁকে বলেন, “আপনি শান্ত হোন। নইলে রক্তচাপ বেড়ে যাবে!” প্রণববাবু এতটা রেগে যাওয়ায় বিজেপি নেতারাও কিছুটা হতচকিত হয়ে যান। কেন না সংসদে অর্থবিল পাশ হওয়ার আগে এই অর্থমন্ত্রীই বিজেপির সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্ক রেখে চলছিলেন। তা ছাড়া চিদম্বরমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও যে খুব একটা মধুর নয়, তা সকলেরই জানা। পরে অবশ্য প্রণববাবু তাঁর আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন।
এই সব মান-অভিমানের মাঝে বিজেপি কিন্তু মূল দাবি থেকে সরেনি। বরং তাঁদের দাবিতে চিদম্বরমকে সংসদে এসে বিবৃতি দিতে হয়। চিদম্বরম বলেন, “যে হেতু কার্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাই তার একটি বিবৃতি পড়ে শোনাচ্ছি।” এই বলে পুত্রের একটি বিবৃতি চিদম্বরম লোকসভায় পড়ে শোনান, যাতে বলা হয় যে, “এয়ারসেল সংস্থায় ৫ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছি বলে যে অভিযোগ যশবন্ত সিন্হা করেছেন তা ভ্রান্ত। আমার বা আমার পরিবারের কারও কোনও টেলিকম সংস্থায় অংশিদারী নেই।”
বিজেপি হইচই করে লোকসভা মুলতুবি করে দেওয়ার পরেও চুপ থাকেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংসদের বাইরেও দীর্ঘ ব্যাখ্যা দেন তিনি। চিদম্বরম বলেন, “এয়ারসেল-ম্যাক্সিস দূরস্থান, কোনও টেলিকম সংস্থাতেই কার্তি বা আমার পরিবারের কারও শেয়ার নেই। ওঁরা জানেন না ওঁরা কী বলছেন। ভগবান ওঁদের ক্ষমা করুন।” কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, চিদম্বরম যে চাপে পড়েছেন তা তাঁর আচরণেই স্পষ্ট। না হলে সচরাচর কোনও বিষয়ে চিদম্বরম সংবাদমাধ্যমকে এত ব্যাখ্যা কখনও দেননি। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, এই তামিল নেতা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন, তাঁকে নিয়ে একের পর এক বিতর্ক আখেরে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলছে। এটা তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। |